পাতা:চারিত্রপুজা ২য় সংস্করণ.pdf/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর فنانا আসতে পারে, কারণ এ তো সম্প্রদায়ের নয়। এর ভিতরকার বাণীটা হোলো “শাস্তম্ শিবম্ অদ্বৈতম।” আশ্রমের মধ্যে যে গভীর শাস্তি আছে, সেটা কেউ মুক্তভাবে নিতে পারে তো নেয়। মোহমুগ্ধ ক’রে তো সে আনন্দ দেওয়া যায় না। সেই জন্তেই কখনও বলেন নি যে, তার বিশেষ একটা মত কাউকে পালন করতে হবে । তার প্রাচীন সংস্কারের বিরুদ্ধে আমার আধুনিকপন্থী অগ্রজেরা অনেক বিরুদ্ধতা করেছেন—তিনি কিন্তু কখনও প্রতিবাদ করেন নি। আমার মধ্যেও অনেক কিছু ছিল, অনেক মতবাদ, যার সঙ্গে তার মতের মিল হয় নি, তবু তিনি শাসন ক’রে র্তার অনুবত্তী হোতে কখনও আজ্ঞা করেন নি। তিনি জানতেন যে, সত্য শাসনের অনুগত নয়, তাকে পাওয়ার হোলে পাওয়া যায়, নইলে যায়ই না। অত্যাচার করেন অনেক গুরু, নিজেদের মতবাদ দিয়ে অনুৰক্তদের আষ্টেপৃষ্ঠে বন্ধন ক’রে ; গিট বাধতে গিয়ে র্তারা সোন হারান। আমার পিতৃদেব স্বতন্ত্র ছিলেন, আমাদের স্বাতন্ত্র্যও তিনি শ্রদ্ধা করতেন । কোনও দিন বাধতে চান নি। মরবার আগে তিনি ব’লে গিয়েছিলেন যে, শাস্তিনিকেতন আশ্রমে যেন তার কোনও বাইরের চিহ্ন বা প্রতিকৃতি না থাকে। তার এই অস্তিম বচনে সেই নিঃসংসত্ত আত্মার মুক্তির বাণী যেন ধ্বনিত হয়েছে। তিনি বুঝেছিলেন, যদি নিজেকে মুক্তি দিতে হয় তবে অন্তকেও মুক্তি দিতে হবে। যা বড়ো, কেবলমাত্র মুক্তির ক্ষেত্রেই তা থাকতে পারে ; মুক্ত আকাশেই জ্যোতিষ্ক সঞ্চরণ করে, প্রদীপকেই কুটীরের মধ্যে সস্তপণে রাখতে হয়। এই যুক্তির শিক্ষা তার কাছ থেকে আমি পেয়েছি। তার কাছেই শিখেছি যে, সত্যকে জোর ক’রে দেওয়া যায় না ; বহু বিরুদ্ধতার ভিতর অপেক্ষা ক’রে থাকতে হয়। এই আমার আজকের দিনের কথা ।*

  • ৬ই মাঘ ( ১৩৪২ ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৃত্যুবাধিক তিধিতে শান্তি

নিকেতন-মন্দিরে প্রদত্ত ভাষণ ।