পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা SS নাই। ব্যয়কাতর কৃপণের ধনের মতো, ছোটো বড়ো-মাঝারি, ক্ষণিক এবং চিরন্তন, সকলপ্রকার মাহাত্ম্যকেই শাদা-পাথর দিয়া চাপা রাখিবার প্ৰবৃত্তি যদি আমাদের না হয় তবে তাহা লইয়া লজ্জা না করিলেও চলে। ভক্তিকে যদি প্ৰতিদিনের ব্যবহারযোগ্য করিতে হয়, তবে তাহা হইতে প্ৰতিদিনের অভ্যাগত অনাবশ্যক ভারগুলি বিদায় করিবার উপায় রাখিতে হয়, তাহার বিপরীত প্ৰণালীতে সমস্তই স্তপোকার করিবার চেষ্টা না করাই ভাল । যাহা বিনষ্ট হইবার, তাহাকে বিনষ্ট হইতে দিতে হইবে, যাহা অগ্নিতে দগ্ধ হইবার, তাহা ভস্ম হইয়া যাক ! মৃতদেহ যদি লুপ্ত হইয়া না। যাইত, তবে পৃথিবীতে জীবিতের অবকাশ থাকিত না, ধরাতল একটি প্ৰকাণ্ড কবরস্থান হইয়া থাকিত । আমাদের হৃদয়ের ভক্তিকে পৃথিবীর ছোটো এবং বড়ো, খাটি এবং ঝুটা, সমস্ত বড়োতের গোরস্থান করিয়া বাখিতে পারি না । যাহা চিরজীবী, তাহাই থাকি ; যাহা মৃতদেহ, আজবাদে-কালি কীটের খাদ্য হইবে, তাহাকে মুগ্ধস্নেহে ধরিয়া রাখিবার চেষ্টা না করিয়া শোকের সহিত অথচ বৈরাগ্যের সহিত । শ্মশানে ভস্ম করিয়া আসাই বিহিত। পাছে ভূলি, এই আশঙ্কীয় নিজেকে উত্তেজিত রাখিবার জন্য কল বানাইবার চেয়ে ভোলাই ভাল । ঈশ্বর আমাদিগকে দয়া করিয়াই বিস্মরণশক্তি দিয়াছেন । সঞ্চয় নিতান্ত অধিক হইয়া উঠিতে থাকিলে, বাছাই-করা দুঃসাধ্য হয়। তাহা ছাড়া সঞ্চায়ের নেশা বড় দুৰ্জয় নেশা-একবার যদি হাতে কিছু জমিয়া যায়, তবে জমাইবার ঝোক আর সামলানো যায় না। আমাদের দেশে ইহাকেই বলে-নিরেনকবইয়ের ধাক্কা । যুরোপ একবার বড়লোক জমাইতে আরম্ভ করিয়া এই নিরেনব্বিইয়ের আবৰ্ত্তের মধ্যে পড়িয়া গেছে। যুরোপে দেখিতে পাই, কেহ বা ডাকের টিকিট জমায়, কেহ বা দেশালাইয়ের বাক্সের কাগজের আচ্ছাদন জমায়, কেহ না