পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা Se) সেই স্মৃতিপালন কহে না ; স্মরণব্যাপার প্রত্যেকের পক্ষে প্ৰত্যহের क6यJ । যুরোপে এই ক্ষমতা এবং মাহাক্স্যের প্রভেদ লুপ্তপ্ৰায়। উভয়েরই জয়ধ্বজা একই।-রকম- এমন কি, মাহাক্স্যের পতাকাই যেন কিছু খাটো। পাঠকগণ অনুধাবন করিয়া দেখিলেই বুঝিতে পরিবেন, বিলাতে অভিনেতা আভিঙের সম্মান পরমসাধুর প্রাপ্য সম্মান অপেক্ষা অল্প নহে। রামমোহন রায় আজ যদি ইংলণ্ডে যাইতেন, তবে তাহার গৌরব ক্রিকেট-খেলোয়াড় রঞ্জিতসিংহের গৌরবের কাছে খর্ব হইয়া থাকিত । আমরা কবিচরিতনামক প্ৰবন্ধে উল্লেখ করিয়াছি, য়ুরোপে ক্ষমতাশালী লোকের জীবনচরিত লেখার একটা নিরতিশয় উদ্যম আছে । যুরোপকে চরিতরায়ুগ্ৰস্ত বলা যাইতে পারে। কোনোমতে একটা যেকোনো-প্রকারের বড়লোকত্বের সুদূর গন্ধাটুকু পাইলেই তাহার সমস্ত চিঠিপত্র, গল্পগুজব, প্রাত্যহিক ঘটনার সমস্ত আবৰ্জনা সংগ্ৰহ করিয়া মোটা দুই ভালুমে লিখিত জীবনচরিতের জন্য লোকে স্থা করিয়া বসিয়া “থাকে। যে নাচে, তাহার জীবনচরিত, যে গান করে, তাহার জীবনচরিত, যে হাসাইতে পারে, তাহার জীবনচরিত-জীবন যাহার যেমনই হোক, যে-লোক কিছু-একটা পারে, তঁহারই জীবনচরিত ! কিন্তু যে মহাত্মা জীবনযাত্রার আদর্শ দেখাইয়াছেন, তঁহারই জীবনচরিত সার্থক-যাহারা সমস্ত জীবনের দ্বারা কোনো কাজ করিয়াছেন, তাহাদেরই জীবন আলোচ্য-যিনি কবিতা লিখিয়াছেন, গান তৈরি করিয়াছেন, "তিনি কবিতা এবং গানই দান করিয়া গেছেন, তিনি জীবন দান করিয়া ষান নাই, তাহার জীবনচরিতে কাহার কি প্রয়োজন ? টেনিসনের কবিতা পড়িয়া আমরা টেনিসনকে যতো বড়ো করিয়া জানিয়াছি, তঁহায় জীবনচরিত পড়িয়া তাঁহাকে তাহা অপেক্ষা অনেক ছোটাে করিয়া ‘জানিয়াছি মাত্র।