পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা SCR বারোয়ারির স্মৃতিপালনচেষ্টার মধ্যে, গভীর শূন্যতা দেখিয়া আমরা পদেপদে ক্ষুব্ধ হই। নিজের দেবতাকে কোন প্ৰাণে এমন কৃত্রিম সভায় উপস্থিত করিয়া পূজার অভিনয় করা হয়, বুঝিতে পারি না। সেই অভিনয়ের আয়োজনে যদি মালমসলা কিছু কম হয়, তবে আমরা পরস্পরকে লজ্জা দিই-কিন্তু লজার বিষয় গোড়াতেই । যিনি ভক্ত, তিনি মহতের মাহাত্ম্যকীৰ্ত্তন করিবেন, ইহা স্বাভাবিক এবং সকলের পক্ষেই শুভফলপ্ৰদ ; কিন্তু মহাত্মাকে লইয়া সকলে মিলিয়া একদিন বারোয়ারির কোলাহল তুলিয়া কৰ্ত্তব্যসমাধার চেষ্টা লজ্জাকর এবং নিস্ফল। বিদ্যাসাগর আমাদের সমাজে ভক্তিলাভ করেন নাই, এ কথা কোনোমতেই বলা যায় না । তাহার প্রতি বাঙালিমাত্রেরই ভক্তি অকৃত্ৰিম । কিন্তু র্যাহারা বর্ষে বর্ষে বিদ্যাসাগরের স্মরণসভা আহবান করেন, তাহারা বিদ্যাসাগরের স্মৃতিরক্ষার জন্য সমুচিত চেষ্টা হইতেছে না বলিয়া আক্ষেপ করিতে থাকেন। ইহাতে কি এই প্ৰমাণ হয় যে, বিদ্যাসাগরের জীবন আমাদের দেশে নিস্ফল হইয়াছে ? তাহা নহে। তিনি আপন মহত্ত্বদ্বারা দেশের হৃদয়ে আমরস্থান অধিকার করিয়াছেন, সন্দেহ নাই । নিৰ্ম্মফল হইয়াছে তাহার স্মরণসভা । বিদ্যাসাগরের জীবনের যে উদ্দেশ্য, তাহা তিনি নিজের ক্ষমতাবলেই সাধন করিয়াছেন-স্মরণসভার যে উদ্দেশ্য, তাহ সাধন করিবার ক্ষমতা স্মরণসভার নাই, উপায় সে জানে মঙ্গলভাব স্বভাবতই আমাদের কাছে কতো পূজ্য, বিদ্যাসাগর তাহার দৃষ্টান্ত । তাহার অসামান্য ক্ষমতা অনেক ছিল, কিন্তু সেই সকল ক্ষমতায় তিনি আমাদিগকে আকর্ষণ করেন নাই। তঁাহার। দয়া, তাহার অকৃত্ৰিম অশ্ৰান্ত লোকহিতৈষাই তাহাকে বাংলাদেশের আবালবৃদ্ধবনিতার হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। নূতন ফ্যাশনের টানে পড়িয়া আমরা যতোই আড়ম্বর করিয়া যতো চেষ্টাই করি না কেন, আমাদের অন্তঃকরণ