পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা &> অন্ন, জলাভাবিকালে জল দান করিয়াছে।--তাহারাই দেশের শিক্ষাবিধান, শিল্পের উন্নতি, আনন্দকর উৎসবরক্ষা ও গুণীর উৎসাহসাধন করিয়াছে, হিতানুষ্ঠানে আজ যদি আমরা পূর্বাভ্যাসক্রমে তাহাদের দ্বারস্থ হই, তবে সামান্য ফল পাইয়া অথবা নিম্বফল হইয়া কেন ফিরিয়া আসি ? বরঞ্চ আমাদের মধ্যবিত্তগণ সাধারণ কাজে যেরূপ ব্যয় করিয়া থাকেন, সম্পদের তুলনা করিয়া দেখিলে ধনীরা তাহ করেন না। তঁহাদের দ্বারবানগণ স্বদেশের অভাবকে দেউড়ি পার হইয়া প্রাসাদে ঢুকিতে দেয় না-ভ্রমক্রমে ঢুকিত্বে দিলেও ফিরিবার সময় তাহার মুখে অধিক উল্লাসের লক্ষণ দেখা যায় না । ইহার কারণ, আমাদের ধনীদের ঘরে বিলাতের বিলাসিত প্ৰবেশ করিয়াছে, অথচ বিলাতের ঐশ্বৰ্য্য নাই। নিজেদের ভোগের জন্য তাহদের অর্থ উদ্ধৃত্তি থাকে বটে, কিন্তু সেই ভোগের আদর্শ বিলাতের। বিলাস্তের ভোগীরা ভারবিহীন স্বাধীন ঐশ্বৰ্য্যশালী, নিজের ভাণ্ডারের সম্পূর্ণ কীৰ্ত্তা। সমাজবিধানে আমরা তাহ নহি । অথচ ভোগের আদর্শ সেই বিলাতি ভোগীর অনুরূপ হওয়াতে খাটে-পালঙ্কে, বসনে-ভুষণে, গৃহসজ্জায়, গাড়িতেজুড়িতে আমাদের ধনী দিগকে আর বদান্যতার অবসর দেয় না।-- তাহাদের বদান্যতা বিলাতি জুতাওয়ালা, টুপিওয়ালা, ঝাড়লণ্ঠনওয়ালা, চৌকিটেবিলওয়ালার সুবৃহৎ পকেটের মধ্যে নিজেকে উজাড় করিয়া দেয়, শীর্ণ কঙ্কালসার দেশ রিক্তহস্তে মানমুখে দাড়াইয়া থাকে। দেশী গৃহস্থের বিপুল কৰ্ত্তব্য এবং বিলাতি ভোগীর বিপুল ভোগ, এই দুই ভার একলি কয়জনে বহন করিতে পারে ?