পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত SRS ও ক্ষুদ্র স্বার্থের মধ্যে এক মহত্বের আদর্শলোক, দৈনন্দিন মানবজীবনের অবসাদ ও অস্বাস্থ্যের মধ্যে সৌন্দৰ্য্যের এক নিভৃত নিকুঞ্জবন রচনা · করিতে পারে, তবেই তাহার এই কীৰ্ত্তি তাহার উপযুক্ত গৌরব লাভ করিতে পরিবে । 由

  • বাংলাভাষার বিকাশে বিদ্যাসাগরের প্রভাব কিরূপ কাৰ্য্য করিয়াছে, এখানে তাহা স্পষ্ট করিয়া নির্দেশ করা আবশ্যক।

বিদ্যাসাগর বাংলাভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী ছিলেন। তৎপূর্বে বাংলায় গদ্যসাহিত্যের সূচনা হইয়াছিল, কিন্তু তিনিই সর্বপ্রথমে বাংলাগদ্যে কলানৈপুণ্যের অবতারণা করেন। ভাষা-যে কেবুল ভাবের একটা আধারমাত্র নহে, তাহার মধ্যে যেন-তেন-প্রকারেণ কতকগুলা বক্তব্যবিষয় পূরিয়া দিলেই যে কৰ্ত্তব্যসমাপন হয় না, বিদ্যাসাগর দৃষ্টান্তদ্বারা তাহাই প্ৰমাণ করিয়াছিলেন। তিনি দেখাইয়াছিলেন যে, যতোটুকু বক্তব্য, তাহা সরল করিয়া, সুন্দর করিয়া এবং সুশৃঙ্খল করিয়া ব্যক্ত করিতে হইবে। আজিকার দিনে এ কাজটিকে তেমন বৃহৎ বলিয়া মনে হইবে না, কিন্তু সমাজবন্ধন যেমন মনুষ্যত্ববিকাশের পক্ষে অত্যাবশ্যক, তেমনি ভাষাকে কলাবন্ধনের দ্বারা সুন্দরীরূপে সংযমিত না করিলে, সে ভাষা হইতে কদাচ প্ৰকৃত সাহিত্যের উদ্ভব হইতে পারে না । সৈন্যদলের দ্বারা যুদ্ধ সম্ভব, কেবলমাত্র জনতার দ্বারা নহে ;-জনতা নিজেকেই নিজে খণ্ডিত-প্ৰতিহত করিতে থাকে, তাহাকে চালনা করাই কঠিন। বিদ্যাসাগর বাংলা গদ্যভাষার উচ্ছঙ্খল জনতাকে সুবিভক্ত, সুবিন্যস্ত, সুপরিচ্ছন্ন এবং সুসংযত করিয়া তাহাকে সহজ গতি এবং কাৰ্য্যকুশলতা দান করিয়াছেন- এখন তাহার দ্বারা অনেক সেনাপতি ভাবপ্ৰকাশের কঠিন বাধাসকল পরাহত করিয়া সাহিত্যের নব নব ক্ষেত্র আবিষ্কার ও অধিকার করিয়া লইতে পারেন-কিন্তু যিনি এই সেনানীর রচনাকৰ্ত্তা, যুদ্ধজয়ের যশোভাগ সর্বপ্রথমে তাহাকেই দিতে হয়।