পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

决8... চারিত্রিপূজা । বাংলাভাষাকে পূর্বপ্রচলিত অনাবশ্যক সমাসাড়ম্বরভার হইতে মুক্ত করিয়া, তাহার পদগুলির মধ্যে অংশযোজনার সুনিয়ম স্থাপন করিয়া বিষ্ঠ্যাসাগর যে বাংলা গদ্যকে কেবলমাত্র। সর্বপ্ৰকারব্যবহারযোগ্য।" করিয়াই ক্ষান্ত ছিলেন, তাহা নহে, তিনি তাহাকে শোভন করিবার জন্যও সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। গদ্যের পদগুলির মধ্যে একটা ধ্বনিসামঞ্জস্য স্থাপন করিয়া, তাহার গতির মধ্যে একটি অনতিলক্ষ্য ছন্দঃস্রোত রক্ষা করিয়া, সৌম্য এবং সরল শব্দগুলি নির্বাচন করিয়া বিদ্যাসাগর বাংলাগন্তকে সৌন্দৰ্য্য ও পরিপূর্ণতা দান করিয়াছেন। গ্রাম্যপাণ্ডিত্য এবং গ্ৰাম্যবর্বরতা, উভয়ের হস্ত হইতেই উদ্ধার করিয়া তিনি ইহাকে পৃথিবীর । ভদ্রসভার উপযোগী আৰ্য্যভাষারূপে গঠিত করিয়া গিয়াছেন। তৎপূর্বে বাংলাগিদ্যের যে অবস্থা ছিল, তাহা আলোচনা করিয়া দেখিলে এই ভাষাগঠনে বিদ্যাসাগরের শিল্পপ্রতিভা ও সৃষ্টিক্ষমতার প্রচুর পরিচয় 9tegi is কিন্তু প্ৰতিভাসম্পন্ন বলিয়া বিদ্যাসাগরের সম্মান নহে। বিশেষত বিষ্ঠাসাগর যাহার উপর আপন প্রতিভা প্রয়ােগ করিয়াছিলেন, তাহ। প্রবহমান,-পরিবর্তনশীল । ভাষা নদীস্রোতের মতে-তাহার উপরে কাহারো নাম খুন্দিয়া রাখা যায় না। মনে হয়, যেন সে চিরকাল এবং সর্বত্র স্বভাবতই এইভাবে প্ৰবাহিত হইয়া আসিতেছে। বাস্তবিক সে যে কোন কোন নিবারধারায় গঠিত ও পরিপুষ্ট, তাহা নির্ণয় করিতে হইলে উজান মুখে গিয়া পুরাবৃত্তের দুৰ্গম গিরিশিখরে আরোহণ করিতে হয়। বিশেষ গ্রন্থ অথবা চিত্র অথবা মূৰ্ত্তি চিরকাল আপনার স্বাতন্ত্র্যরক্ষা করিয়া আপন রচনাকৰ্ত্তাকে স্মরণ করাইয়া দেয়, কিন্তু ভাষা ছোটে-বড়ো অসংখ্য লোকের নিকট হইতে জীবনলাভ করিতে করিতে ব্যাপ্ত হইয়া পূর্ব ইতিহাস বিশ্বত হইয়া চলিয়া যায়, বিশেষরূপে কাহারো নাম ঘোষণা করে না ।