পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত SR6 - কিন্তু সেজন্য অ্যাক্ষেপ করিবার প্রয়োজন নাই ; কারণ, বিদ্যাসাগরের গৌরব কেবলমাত্র তাহার প্রতিভার উপর নির্ভর করিতেছে না । প্ৰতিভা মানুষের সমস্তটা নহে, তাহা মানুষের একাংশমাত্র । প্ৰতিভা মেঘের মধ্যে বিদ্যুতের মতে, আর মনুষ্যত্ব চরিত্রের দিবালোক, তাহা সৰ্ব্বত্রব্যাপী ও স্থির। প্ৰতিভা মানুষের সর্বশ্ৰেষ্ঠ অংশ-আর, মনুষ্যত্ব জীবনের সকল মুহূৰ্ত্তেই সকল কাৰ্য্যেই আপনাকে ব্যক্ত করিতে থাকে। প্ৰতিভা অনেক সময়ে বিদ্যুতের ন্যায় আপনার আংশিকতাবশতই লোকচক্ষে তীব্ৰতররূপে আঘাত করে এবং চরিত্ৰমহত্ব আপনার ব্যাপকতা গুণেই প্ৰতিভা অপেক্ষা স্নানতর বলিয়া প্ৰতীয়মান হয় । কিন্তু চরিত্রের শ্রেষ্ঠতাই যে যথার্থ শ্রেষ্ঠতা, ভাবিয়া দেখিলে সে বিষয়ে কাহারে সংশয় থাকিতে পারে না। ভাষা, প্ৰস্তর অথবা চিত্রপটের দ্বারা সত্য এবং সৌন্দৰ্য্য প্ৰকাশ করা ক্ষমতার কাৰ্য্য, সন্দেহ নাই, তাহাতে বিচিত্র বাধা অতিক্রম এবং অসামান্তনৈপুণ্য প্রয়োগ করিতে হয়। কিন্তু নিজের সমগ্র জীবনের দ্বারা সেই সত্য ও সৌন্দৰ্য্য প্ৰকাশ করা তদপেক্ষা আরো বেশি দুরূহ, তাহাতে পদে পদে কঠিনতর বাধা অতিক্ৰম করিতে হয় এবং তা হাতে স্বাভাবিক সুন্ম ৰোধশক্তি ও নৈপুণ্য, সংযম ও বল অধিকতর আবশ্যক হয়। এই চরিত্ররচনার প্রতিভা কোনো সাম্প্রদায়িক শাস্ত্ৰ মানিয়া চলে না । প্ৰকৃত কবির কবিত্ব যেমন অলঙ্কারশাস্ত্রের অতীত, অথচ বিশ্বহৃদয়ের মধ্যে বিধিরচিত নিগৃঢ়নিহিত এক অলিখিত অলঙ্কারশাস্ত্রের কোনো নিয়মের সহিত তাহার স্বভাবত কোনো-বিরোধ হয় না, তেমনি র্যাহারা যথার্থমনুষ্য তঁহাদের শাস্ত্ৰ ভঁহাদের অন্তরের মধ্যে, অথচ বিশ্বব্যাপী মনুষ্যত্বের সমস্তু নিত্যবিধানগুলির সঙ্গে সে শাস্ত্র আপনি মিলিয়া যায়। অতএব, অন্যাঙ্ক প্ৰতিভায় যেমন “ওরিজিন্ন্যালিটি” অৰ্থাৎ অনন্যতন্ত্রতা প্ৰকাশ পায়, মহচরিত্রবিকাশেও সেইরূপ অনন্যতন্ত্রতার প্রয়োজন হয়।--অনেকে বিদ্যা- ,