পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

so চারিত্র পূজা সৰ্ববিধ লোকের সহিত, সমভাবে সদয় ও সাদর ব্যবহার করিতেন । তিনি যাহাদিগকে কপটাচারী মনে করিতেন, তাহদের সহিত সাধ্যপক্ষে আলাপ করিতেন না । তিনি স্পষ্টবাদী ছিলেন, কেহ রুষ্ট বা অসন্তুষ্ট হইবেন, ইহা ভাবিয়া, স্পষ্টকথা বলিতে ভীত বা সস্কুচিত হইতেন না । তিনি যেমন স্পষ্টবাদী, তেমনই যথার্থবাদী ছিলেন। কাহারও ভয়ে বা অনুরোধে, অথবা অন্য কোনও কারণে তিনি, কখনও কোনও বিষয়ে অযথা নির্দেশ করেন নাই । তিনি র্যাহাদিগকে আচরণে ভদ্র দেখিতেন, তাহাদিগকেই ভদ্র বলিয়া গণ্য করিতেন ; আর র্যাহাদিগকে আচরণে অভদ্র দেখিতেন, বিদ্বান, ধনবান ও ক্ষমতাপন্ন হইলেও, তাহাদিগকে ভদ্রলোক বলিয়া জ্ঞান করিতেন না ।” * এদিকে তর্কভূষণ মহাশয়ের বল এবং সাহসও আশ্চৰ্য্য ছিল । সর্বদাই তাহার হস্তে একখানি লৌহদণ্ড থাকিত। তখন দাসু্যািভয়ে অনেকে একত্র না হইয়া স্থানান্তরে যাইতে পারিত না, কিন্তু তিনি একা এই লৌহদণ্ডহস্তে অকুতোভয়ে সর্বত্র যাতায়াত করিতেন ; এমন কি, দুইচারিবার আক্রান্ত হইয়া দস্ল্যাদিগকে উপযুক্তরূপ শিক্ষা দিয়াছিলেন। একুশবৎসর বয়সে একবার তিনি এক ভালুকের সম্মুখে পড়িয়াছিলেন। “ভালুক নখরপ্ৰহারে তাহার সর্বশরীর ক্ষতবিক্ষত করিতে লাগিল, তিনিও অবিশ্রান্ত লৌহযষ্টি প্রহার করিতে লাগিলেন। ভালুক ক্ৰমে নিস্তেজ হইয়া পড়িলে, তিনি, তদীয় উদরে উপযুপরি পদাঘাত করিয়া, তাহার প্রাণসংহার করিলেন।” এ অবশেষে শোণিতঅক্ষত বিক্ষতদেহে চারিক্রোশ পথ হাটিয়া মেদিনীপুরে এক আত্মীয়ের গৃহে শয্যা আশ্ৰয় করেন ;-দুইমাস পরে সুস্থ হইয়া বাড়ি ফিরিতে পারেন। ar

  • স্বরচিত বিদ্যাসাগর চরিত, ৩৪ পৃষ্ঠা। * স্বরচিত বিদ্যাসাগরচারিত।