পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত Vo পুরুষের ইতিহাস বাহিরের নানা কাৰ্য্যে এবং জীবনবৃত্তান্তে স্থায়ী হয়, আর, মহৎ-নারীর ইতিহাস র্তাহার পুত্রের চরিত্রে তাহার স্বামীর কাৰ্য্যে রচিত হইতে থাকে, এবং সে লেখায় তাহার নামোল্লেখ থাকে না । অতএব, বিদ্যাসাগরের জীবনে তঁাহার মাতার জীবনচরিত কেমন করিয়া লিখিত হইয়াছে, তাহা ভালোরূপ আলোচনা না করিলে উভয়েরই জীবনী অসম্পূর্ণ থাকে। আর, আমরা যে মহাত্মার স্মৃতিপ্ৰতিমাপূজার জন্য এখানে সমবেত হইয়াছি, যদি তিনি কোনোরূপ সূক্ষ্ম চিন্ময় দেহে অদ্য এই সভায় আসনগ্ৰহণ করিয়া থাকেন, এবং যদি এই অযোগ্য ভক্তকর্তৃক তাহার চরিতকীৰ্ত্তন তাহার শ্রুতিগোচর হয়, তবে এই রচনায় যে অংশে তাহার জীবনী অবলম্বন করিয়া তাহার মাতৃদেবীর মাহাত্ম্য মহীয়ান হইয়াছে, সেইখানেই তাহার দিব্যনেত্ৰ হইতে প্ৰভূততম পুণ্যাশ্রীবর্ষণ হইতে থাকিবে, তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই । বিদ্যাসাগর তাহার বর্ণপরিচয় প্ৰথমভাগে গোপালনামক একটি সুবোধ ছেলের দৃষ্টান্ত দিয়াছেন, তাহাকে বাপমায়ে যাহা বলে, সে তাহাই করে। কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্ৰ নিজে যখন সেই গোপালের বয়সী ছিলেন, তখন গোপালের অপেক্ষা কোনো কোনো অংশে রাখালের সঙ্গেই র্তাহার অধিকতর সাদৃশ্য দেখা যাইত। পিতার কথা পালন করা দূরে থাক, পিতা যাহা বলিতেন, তিনি ঠিক তাহার উল্টা করিয়া বসিতেন। শভুচন্দ্ৰ লিখিয়াছেন-“পিতা তাহার স্বভাব বুঝিয়া চলিতেন। যেদিন শান্দাবস্ত্র না থাকিত, সেদিন বলিতেন, আজ ভাল কাপড় পরিয়া কলেজে যাইতে হইবে, তিনি হঠাৎ বলিতেন, না, আজ ময়লা কাপড় পরিয়া যাইব । যেদিন বলিতেন, আজ স্নান করিতে হইবে, শ্রবণমাত্র দাদা বলিতেন যে, আজ স্নান করিব না ; পিতা প্ৰহার করিয়াও স্বান করাইতে পারিতেন না। সঙ্গে করিয়া ট্যাকশালের ঘাটে নামাইয়া