পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত SS বিদ্যাসাগর, সাহেবের হস্ত হইতে শিরোপা লইবার জন্য কখনো মাথা নিত করেন নাই ; তিনি আমাদের দেশের ইংরাজপ্ৰসাদগৰ্বিবত সাহেবানু- , জীবীদের মতো আত্মাবমাননার মূল্যে বিক্রীত সম্মান ক্রয় করিতে চেষ্টা করেন নাই। একটা উদাহরণে তাহার প্রমাণ হইবে,-একবার তিনি কাৰ্য্যোপলক্ষ্যে হিন্দুকলেজের প্রিন্সিপল কাবু-সাহেবের সঙ্গে দেখা করিতে গিয়াছিলেন। সভ্যতাভিমানী সাহেব তাহার বুটু-বেষ্টিত দুই পা টেবিলের উপরে উৰ্দ্ধগামী করিয়া দিয়া বাঙালী ভদ্রলোকের সহিত ভদ্রতরক্ষা করা বাহুল্য বোধ করিয়াছিলেন। কিছুদিন পরে ঐ কারুসাহেব কাৰ্য্যবশত সংস্কৃতকলেজে বিদ্যাসাগরের সহিত দেখা করিতে আসিলে বিদ্যাসাগর চটিজুতাসমেত র্তাহার সর্বজনবন্দনীয় চরণযুগল টেবিলের উপর প্রসারিত করিয়া এই অহঙ্কত ইংরাজ ভ্যাগতের সহিত আলাপ করিলেন। বোধ করি শুনিয়া কেহ বিস্মিত হইবেন না, সাহেব নিজের এই অবিকল অনুকরণ দেখিয়া সন্তোষলাভ করেন নাই । ইতিমধ্যে কলেজের কাৰ্য্যপ্ৰণালীসম্বন্ধে তঁাহার সহিত কর্তৃপক্ষের মতান্তর হওয়ায় ঈশ্বরচন্দ্ৰ কৰ্ম্মত্যাগ করিলেন। সম্পাদক রসময় দত্ত এবং শিক্ষাসমাজের অধ্যক্ষ ময়েটুসাহের অনেক উপরোধ-অনুরোধ করিয়াও কিছুতেই তাহার পণ ভঙ্গ করিতে পারিলেন না। আত্মীয়-বান্ধবের তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তোমার চলিবে কি করিয়া ? তিনি বলিলেন, আলুপটল বেচিয়া, মুদির দোকান করিয়া দিন চালাইব। তখন বাসায় প্ৰায় কুড়িটি বালককে তিনি অন্নবস্ত্ৰ দিয়া অধ্যয়ন করাইতেছিলেনতাহাদের কাহাকেও বিদায় করিলেন না। তঁহার পিতা পূর্বে চাকরি করিতেন—বিদ্যাসাগরের সবিশেষ অনুরোধে কাৰ্য্যত্যাগ করিয়া বাড়ী বসিয়া সংসারখরচের টাকা পাইতেছিলেন। বিদ্যাসাগর কাজ ছাড়িয়া দিয়া প্ৰতিমাসে ধার করিয়া পঞ্চাশটাকা বাড়ী পাঠাইতে লাগিলেন ।