পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8७ চারিত্রিপূজা দয়াবৃত্তি আমাদের অশ্রপাতপ্রবণ বাঙালীহৃদয়কে যত শীঘ্ৰ প্ৰশংসায় বিচলিত করিতে পারে, এমন আর কিছুই নহে। কিন্তু বিদ্যাসাগরের দয়ায় কেবল যে বাঙালীজনীসুলভ হৃদয়ের কোমলতা প্ৰকাশ পায়, তাহা নহে, তাহাতে বাঙালী দুর্লভ চরিত্রের বলশালিতারও পরিচয় পাওয়া যায়। তাহার। দয়া কেবল একটা প্ৰবৃত্তির ক্ষণিক উত্তেজনামাত্র নহে, তাহার মধ্যে একটা সচেষ্ট আত্মশক্তির আচল কর্তৃত্ব সর্বদা বিরাজ করিত বলিয়াই তাহা এমন মহিমশালিনী । এ দয়া অন্যের কষ্টলাধবের চেষ্টার আপনাকে কঠিন কষ্টে ফেলিতে भूछुर्खकालज्ञ জন্য কুষ্ঠিত হইত না । সংস্কৃতকলেজে কাজ করিবার সময় ব্যাকরণ-অধ্যাপকের পদ শূন্য হইলে বিদ্যাসাগর তারানাথ তর্কবাচস্পতির জন্য মার্শাল সাহেবকে অনুরোধ করেন। সাহেব বলিলেন, তঁাহার চাকরি লইবার ইচ্ছা আছে কি না, অগ্ৰে জানা আবশ্যক। শুনিয়া বিদ্যাসাগর সেইদিনে ত্রিশক্রোশ পথ দূরে কালনায় তর্কবাচস্পতির চতুষ্পাঠী-অভিমুখে পদব্ৰজে যাত্রা করিলেন । পরদিনে তর্কবাচস্পতির সম্মতি ও তাহার প্রশংসাপত্রগুলি লইয়া পুনরায় পদব্ৰজে যথাসময়ে সাহেবের নিকট উপস্থিত হইলেন।* পরের উপকার কাৰ্য্যে তিনি আপনার সমস্ত বল ও উৎসাহ প্ৰয়োগ করিতেন । ইহার মধ্যেও তাহার আজন্মকালের একটা জিদ প্ৰকাশ পাইত। সাধারণত আমাদের দয়ার মধ্যে এই জিদ না থাকাতে তাহা সঙ্কীর্ণ ও স্বল্পাফলপ্ৰসু হইয়া বিশীর্ণ হইয়া যায়, তাহা পৌরুষমহত্ত্ব লাভ করে না । কারণ, দয়া বিশেষরূপে স্ত্রীলোকের নহে; প্ৰকৃত দয়া যথার্থ পুরুষেরই ধৰ্ম্ম । দয়ার বিধান পূর্ণরূপে পালন করিতে হইলে দৃঢ় বীৰ্য্য এবং কঠিন অধ্যবসায় আবশ্যক, তা হাতে অনেক সময় সুদূরব্যাপী সুদীর্ঘ কৰ্ম্মপ্ৰণালী অনুসরণ করিয়া চলিতে হয় ; তাহা কেবল ক্ষণকালের

  • সহোদর শম্ভুচন্দ্ৰ বিদ্যারত্ব ශූරිබූෂ বিদ্যাসাগরজীবনচরিত।