পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত 9 তৈল বিতরণ করিত, তাহারা, পাছে মুচি, হাড়ি, ডোম প্রভৃতি অপকৃষ্টজাতীয় স্ত্রীলোক স্পর্শ করে, এই আশঙ্কায় তফাৎ হইতে তৈল দিত, ইহা দেখিয়া অগ্রজমহাশয় স্বয়ং উক্ত, অপকৃষ্ট ও অস্পৃশ্য জাতীয় স্ত্রীলোকদের মাথায় তৈল মাখাইয়া দিতেন ॥৪ এই ঘটনাশ্রবণে আমাদের হৃদয় যে ভক্তিতে উচ্ছসিত হইয়া উঠে, তাহা বিদ্যাসাগরের দয়া অনুভব করিয়া নহে—কিন্তু তাহার দয়ার মধ্য হইতে যে একটি নিঃসঙ্কোচ বলিষ্ঠ মনুষ্যত্ব পরিস্ফুট হইয়া উঠে, তাহা দেখিয়া আমাদের এই নীচজাতির প্রতি চিরাভ্যন্ত ঘূণাপ্রবণ মনও আপন নিগুঢ় মানবধৰ্ম্মবশত ভক্তিতে আকৃষ্ট না হইয়া থাকিতে পারে না । র্তাহার কারুণ্যের মধ্যে যে পৌরুষের লক্ষণ ছিল, তাহার অনেক উদাহরণ দেখা যায়। আমাদের দেশে, আমরা র্যাহাদিগকে ভালোমানুষ অমায়িকপ্ৰকৃতি বলিয়া প্ৰশংসা করি, সাধারণত তাহদের চক্ষুলজ বেশি। অর্থাৎ কৰ্ত্তব্যস্থলে, তাহারা কাহাকেও বেদন দিতে পারেন না । বিন্যাসাগরের দয়ায় সেই কাপুরুষতা ছিল না । ঈশ্বরচন্দ্র যখন কলেজের ছাত্র ছিলেন, তখন তাহদের বেদান্ত-অধ্যাপক শম্ভুচন্দ্ৰ বাচস্পতির সহিত তাহার বিশেষ প্রতিবন্ধন ছিল। বাচস্পতিমহাশয় বৃদ্ধ বয়সে পুনরায় দারপরিগ্ৰহ করিবার ইচ্ছা করিয়া তাহার প্ৰিয়তম ছাত্রের মত জিজ্ঞাসা করিলে ঈশ্বরচন্দ্ৰ প্ৰবল আপত্তিপ্ৰকাশ করিলেন । গুরু বারংবার কাকুতিমিনতি করা সত্ত্বেও তিনি মত পরিবর্তন করিলেন না। তখন বাচস্পতিমহাশয় ঈশ্বরচন্দ্রের নিষেধো কৰ্ণপাত না করিয়া এক সুন্দরী বালিকাকে বিবাহপূর্বক তাহাকে আশু বৈধব্যের তটদেশে আনয়ন করিলেন। শ্ৰীযুক্ত চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় তাহার বিদ্যাসাগর গ্রন্থে এই ব্যাপারের যে পরিণাম বৰ্ণনা করিয়াছেন, তাহা এই স্থলে উদ্ধৃত করি ।