পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(to চারিত্রপূজা “বাচস্পতিমহাশয় ঈশ্বরচন্দ্রের হাত ধরিয়া বলিলেন, “তোমার মাকে দেখিয়া যাও”। এই বলিয়া দাসীকে নববধূর অবগুণ্ঠন উন্মোচন করিতে বলিলেন। তখন বাচস্পতিমহাশয়ের নববিবাহিত পত্নীকে দেখিয়া ঈশ্বরচন্দ্ৰ অশ্রুসংবরণ করিতে পারিলেন না । সেই জননীস্থানীয়া বালিকাকে দর্শন করিয়া ও এই বালিকার পরিণাম চিন্তা করিয়া বালকের ন্যায় রোদন করিতে লাগিলেন । তখন বাচস্পতিমহাশয় “অকল্যাণ করিস না রে ? বলিয়া তাহাকে লইয়া বাহিরাবাটীতে আসিলেন এবং নানাপ্রকার শাস্ত্রীয় উপদেশের দ্বারা ঈশ্বরচন্দ্রের মনের উত্তেজনা ও হৃদয়ের আবেগ রোধ করিতে ও তাহাকে শান্ত করিতে প্ৰয়াস পাইতে লাগিলেন । এইরূপ বহুবিধ প্ৰবোধবাক্যে শান্ত করিতে প্ৰয়াস পাইয়। শেষে ঈশ্বরচন্দ্ৰকে কিঞ্চিৎ জল খাইতে অনুরোধ করিলেন । কিন্তু পাষাণতুল্য-কঠিন প্ৰতিজ্ঞা-পরায়ণ ঈশ্বরচন্দ্ৰ জলযোগ করিতে সম্পূর্ণরূপে অসম্মত হইয়া বলিলেন, “এ ভিটায় আর কখনও জলস্পর্শ করিব না’ ।” বিদ্যাসাগরের হৃদয়বৃত্তির মধ্যে যে বলিষ্ঠতা দেখা যায়, তাহার বুদ্ধিবৃত্তির মধ্যেও তাহার পরিপূর্ণ প্রভাব প্ৰকাশ পায়। বাঙালীর বুদ্ধি সহজেই অত্যন্ত সূক্ষ্ম। তাহার দ্বারা চুল চেরা যায়, কিন্তু বড় বড় গ্ৰন্থি ছেদন করা যায় না। তাহা সুনিপুণ, কিন্তু সবল নহে। আমাদের বুদ্ধি ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার মতো অতি সূক্ষ্ম তর্কের বাহাদুরীতে ছোটে ভালো, কিন্তু কৰ্ম্মের পথে গাড়ি লইয়া চলে না । বিদ্যাসাগর যদিচ ব্ৰাহ্মণ, এবং ন্যায়শাস্ত্রও যথোচিত অধ্যয়ন করিয়াছিলেন, তথাপি যাহাকে বলে কাণ্ডজ্ঞান, সেটা তাহার যথেষ্ট ছিল। এই কাণ্ডজ্ঞানটি যদি না। থাকিত, তবে যিনি একসময় ছোলা ও বাতাসা জলপান করিয়া পাঠশিক্ষা করিয়াছিলেন, তিনি অকুতোভয়ে চাকরী ছাড়িয়া দিয়া স্বাধীনজীবিকা অবলম্বন করিয়া জীবনের মধ্যপথে সচ্ছলস্বচ্ছন্দাবস্থায় উত্তীৰ্ণ হইতে পারিতেন না। আশ্চৰ্য্যের বিষয় এই যে, দয়ার অনুরোধে ।