পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q R চারিত্রিপুজা “ধৰ্ম্মস্য সূক্ষ্মা গতিঃ” । ধৰ্ম্মের গতি সূক্ষ্ম হইতে পারে, কিন্তু ধৰ্ম্মের নীতি সরল ও প্রশস্ত। কারণ, তাহা বিশ্বসাধারণের এবং নিত্যকালের । তাহা পণ্ডিতের ও তার্কিকের নহে। কিন্তু মনুষের দুর্ভাগ্যক্রমে মানুষ আপন সংস্রবের সকল জিনিষকেই অলক্ষিতভাবে কৃত্রিম ও জটিল করিয়া তুলে। যাহা ; সরল, যাহা স্বাভাবিক, যাহা উন্মুক্ত-উদার, যাহা মূল্য দিয়া কিনিতে হয় না, বিধাতা যাহা আলোক বায়ুর ন্যায় মনুষ্যসাধারণকে অযাচিত দান করিয়াছেন, মানুষ আপনি তাহাকে দুৰ্ম্ম ল্যদুৰ্গম করিয়া দেয়। সেইজন্য সহজ কথা ও সরল ভােব প্রচারের জন্য লোকোত্তর মহত্বৈর অপেক্ষা করিতে হয় । বিদ্যাসাগর বাল্যবিধবাবিবাহের ঔচিত্যসম্বন্ধে যে প্ৰস্তাব করিয়াছেন, তাহাও অত্যন্ত সহজ ; তাহার মধ্যে কোনো নূতনত্বের অসামান্য নৈপুণ্য নাই। তিনি প্ৰত্যক্ষব্যাপারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করিয়া এক অমূলক কল্পনালোক সৃজন করিতে আপন শক্তির অপব্যয় করেন নাই । তিনি তাহার বিধবাবিবাহগ্রন্থে আমাদিগকে সম্বোধন করিয়া যে আক্ষেপোক্তি প্ৰকাশ করিয়াছেন, তাহা উদ্ধৃত করিলেই আমার কথাটি পরিষ্কার হইবে । “হা ভারতবর্ষীয় মানবগণ ! • • • • • অভ্যাসদোষে তোমাদের বুদ্ধিবৃত্তি ও ধৰ্ম্মপ্রবৃত্তিসকল এরূপ কলুষিত হইয়া গিয়াছে ও অভিভূত হইয়া রহিয়াছে যে, হতভাগা বিধবাদিগের দুরবস্থাদর্শনে, তোমাদের চিরশুষ্ক হৃদয়ে কারুণ্যরসের সঞ্চার হওয়া কঠিন, এবং ব্যভিচারদোষের ও ভ্ৰাণহত্যাপাপের প্রবল স্রোতে দেশ উচ্ছলিত হইতে দেখিয়াও, মনে ঘূণার উদয় হওয়া অসম্ভাবিত। তোমরা প্ৰাণতুল্য কন্যা প্রভৃতিকে অসহ্য বৈধব্যযন্ত্রণানলে দগ্ধ করিতে সম্মত আছ ; তাহারা দুনিবার-রিপুবশীভূত হইয়া, ব্যভিচারদোষে দূষিত হইলে, তাহার পোষকতা করিতে সম্মত আছ ; ধৰ্ম্মলোপভায়ে জলাঞ্জলি দিয়া, কেবল লোকলজ্জাভয়ে, তাহাদেৱ ভ্ৰাণহত্যার সহায়তা করিয়া স্বয়ং সপরিবারে পাপপঙ্কে কলঙ্কিত