পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

& 8 চারিত্রিপূজা না। সেইজন্য এসম্বন্ধে আমাদের রচনায় নৈপুণ্য প্ৰকাশ পায়, সরলতা প্ৰকাশ পায় না। যথার্থ সবলতার সঙ্গে সঙ্গেই একটা সুবৃহৎ সরলতা থাকে । এই সরলতা, কেবল মতামতে নহে, লোকব্যবহারেও প্ৰকাশ পায়। বিদ্যাসাগর পিতৃদর্শনে কাশীতে গমন করিলে সেখানকার অর্থলোলুপ কতকগুলি ব্ৰাহ্মণ র্তাহাকে টাকার জন্য ধরিয়া-পড়িয়া ছিল। বিদ্যাসাগর তাহাদের অবস্থা ও স্বভাব দূদ্ষ্টে তাহাদিগকে দয়া অথবা ভক্তির পাত্র বলিয়া জ্ঞান করেন নাই, সেইজন্য তৎক্ষণাৎ অকপটচিত্তে উত্তর দিলেন“এখানে আছেন বলিয়া আপনাদিগকে যদি আমি ভক্তি বা শ্রদ্ধা করিয়া বিশ্বেশ্বর বলিয়া মান্য করি, তাহা হইলে আমার মত নরাধম। আর নাই।” ইহা শুনিয়া কাশীর ব্ৰাহ্মণের ক্রোধান্ধ হইয়া বলেন, “তবে আপনি কী মানেন ?” বিদ্যাসাগর উত্তর করিলেন-“আমার বিশ্বেশ্বর ও অন্নপূর্ণ উপস্থিত এই পিতৃদেব ও জননীদেবী বিরাজমান।”* যে বিদ্যাসাগর হীনতমশ্রেণীর লোকেরও দুঃখমোচনে অর্থব্যয় করিতে কুষ্ঠিত হইতেন না, তিনি কৃত্ৰিম কপটভক্তি দেখাইয়া কাশীর ব্ৰাহ্মণের প্রার্থনা পূর্ণ করিতে পারিলেন না । ইহাই বলিষ্ঠ সরলতা, ইহাই যথার্থ পৌরুষ । নিজের আশনবসনেও বিদ্যাসাগরের একটি অটল সরলতা ছিল । এবং সেই সরলতার মধ্যেও দৃঢ় বলের পরিচয় পাওয়া যায়। পূর্বেই দৃষ্টান্ত দেখান গিয়াছে, নিজের তিলমাত্র সম্মানরক্ষার প্রতিও তাহার লেশমাত্ৰ শৈথিল্য ছিল না । আমরা সাধারণত প্ৰবল সাহেবী অথবা প্রচুর নবাবী দেখাইয়া সম্মানলাভের চেষ্টা করিয়া থাকি। কিন্তু আড়ম্বরের চাপল্য বিদ্যাসাগরের উন্নত-কঠোর আত্মসম্মানকে কখনো স্পর্শ করিতে পারিত না। ভূষণহীন সারল্যই তাহার রাজভূষণ ছিল।

  • সহোদর শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ব প্ৰণীত বিদ্যাসাগরজীবনচরিত ।