পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

“登° চারিত্রিপূজা বর্তাহার স্বজাতি-সোদর কেহ ছিল না । এদেশে তিনি তাহার সমযোগ্য সহযোগীর অভাবে আমৃত্যুকাল নির্বাসন ভোগ করিয়া গিয়াছেন। তিনি সুখী ছিলেন না । তিনি নিজের মধ্যে যে এক আকৃত্ৰিম মনুষ্যত্ব সর্বদাই অনুভব করিতেন, চারিদিকের জনমণ্ডলীর মধ্যে তাহার আভাস দেখিতে পান নাই। তিনি উপকার করিয়া কৃতঘ্নতা পাইয়াছেন, কাৰ্য্যকালে সহয়তা প্ৰাপ্ত হন নাই ;-তিনি প্ৰতিদিন দেখিয়াছেন, আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না ; আড়ম্বর করি, কাজ করি না ; যাহা অনুষ্ঠান করি, তাহা, বিশ্বাস করি না ; যাহা বিশ্বাস করি, তাহ পালন করি না ; ভুরিপরিমাণ বাক্যরচনা করিতে পারি, তিলপরিমাণ আত্মত্যাগ করিতে পারি না ; আমরা অহঙ্কার দেখাইয়া পরিতৃপ্ত থাকি, যোগ্যতা লাভের চেষ্টা করি না ; আমরা সকল কাজেই পরের প্রত্যাশা করি, অথচ পরের ত্রুটি লইয়া আকাশ বিদীর্ণ করিতে থাকি ;-পরের অনুকরণে আমাদের গৰ্ব, পরের অনুগ্রহে আমাদের সম্মান, পরের চক্ষে ধূলিনিক্ষেপ করিয়া আমাদের পলিটিক্স, এবং নিজের বাকচাতুৰ্য্যে নিজের প্রতি ভক্তিবিহবল হইয়া উঠাই আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য । এই দুর্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কৰ্ম্মহীন, দাম্ভিক, তাকিকজাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের এক সুগভীর ধিক্কার ছিল । কারণ, তিনি সর্ববিষয়েই ইহাদের বিপরীত ছিলেন। বৃহৎ বনস্পতি যেমন ক্ষুদ্র বনজঙ্গলের পরিবেষ্টন হইতে ক্ৰমেই শূন্য আকাশে মস্তক তুলিয়া উঠে-বিদ্যাসাগর সেইরূপ বয়োবৃদ্ধিসহকারে বঙ্গসমাজের সমস্ত অস্বাস্থ্যকর ক্ষুদ্রতাজাল হইতে ক্রমশই শব্দহীন সুদূর নির্জনে উত্থান করিয়াছিলেন ; সেখান হইতে তিনি তাপিতকে ছায়া এবং ক্ষুধিতকে ফলদান করিতেন ; কিন্তু আমাদের শতসহস্ৰ ক্ষণজীবী সভাসমিতির ঝিল্পীঝঙ্কার হইতে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র ছিলেন। ক্ষুধিত-পীড়িত অনাথ-অসহায়দের জন্য আজ তিনি বৰ্ত্তমান নাই,-কিন্তু র্তাহার মহৎ চরিত্রের যে অক্ষয়বট তিনি বঙ্গভূমিতে রোপণ করিয়া গিয়া