পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R চারিত্রিপূজা ইহার অনুরূপ তর্ক এই যে, “থ্যাঙ্ক যু’র প্রতিবাক্য আমরা বাংলায় ব্যবহার করি না, অতএব আমরা অকৃতজ্ঞ । “থ্যাঙ্ক যু” শব্দের দ্বারা হাতে-হাতে কৃতজ্ঞতা ঝাড়িয়া ফেলিবার একটা চেষ্টা আছে, সেটা আমরা জবাবস্বরূপ বলিতে পারি। যুরোপ কাহারে কাছে বাধ্য থাকিতে চাহে না-সে। স্বতন্ত্র। কাহারে কাছে তাহার কোনো দাবী নাই, সুতরাং যাহা পায়, তাহা সে গায়ে রাখে না। শুধিয়া তখনি নিস্কৃতি পাইতে চায় । পরস্পরের প্রতি আমাদের দাবী আছে, আমাদের সমাজের গঠনই সেইরূপ। আমাদের সমাজে যে ধনী, সে দান করিবে ; যে গৃহী, সে আতিথ্য করিবে ; যে জ্ঞানী, সে অধ্যাপন করিবে ; যে জ্যেষ্ঠ, সে পালন করিবে ; যে কনিষ্ঠ, সে সেবা করিবে ;-ইহাই বিধান। পরস্পরের দাবীতে আমরা পরস্পর বাধ্য। ইহাই আমরা মঙ্গল বলিয়া জানি । প্রার্থী যদি ফিরিয়া যায়, তবে ধনীর পক্ষেই তাহ অশুভ ; অতিথি। যদি ফিরিয়া যায়, তবে গৃহীর পক্ষেই তাহ অকল্যাণ। শুভকৰ্ম্ম কৰ্ম্মকৰ্ত্তার পক্ষেই শুভ । এইজন্য নিমন্ত্রণকারীই নিমন্ত্রিতের নিকট কৃতজ্ঞতাস্বীকার করেন। আহতবর্গের সন্তোষে যে একটি মঙ্গলজ্যোতি গৃহ পরিব্যাপ্ত করিয়া উদ্ভাসিত হয়, তাহ নিমন্ত্রণকারীর পক্ষেই পুরস্কার । আমাদের দেশে নিমন্ত্রণের প্রধানতম ফল নিমন্ত্রিত পায় না, নিমন্ত্রণকারীই পায়-তােহা, মঙ্গলকৰ্ম্ম সুসম্পন্ন করিবার আনন্দ, তাহ রসনাতৃপ্তির অপেক্ষা অধিক । এই মঙ্গল যদি আমাদের সমাজের মুখ্য অবলম্বন না হইত, তবে সমাজের প্রকৃতি এবং কৰ্ম্ম অন্যরকমের হইত। স্বাের্থ এবং স্বাতন্ত্র্যকে যে বড়ো করিয়া দেখে, পরের জন্য কাজ করিতে তাহার সর্বদা উত্তেজনা আবশ্যক করে। সে যাহা দেয়, অন্তত তাহার একটা রসিদ লিখিয়া রাখিতে চায়। তাহার যে ক্ষমতা আছে, সেই ক্ষমতার দ্বারা অন্যের