পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VeR চারিত্রিপূজা ধাতুপ্ৰস্তরময় ভূপিণ্ড লইয়া সূৰ্য্যকে প্ৰদক্ষিণ করিত। বহুযুগ পরে তাহার নিজের অভ্যন্তরে এক অপরূপ প্ৰাণশক্তির বিকাশে জীবনে এবং সৌন্দর্ঘ্যে তাহার স্থলজল পরিপূর্ণ হইয়া গেল। মানবসমাজেও মননশক্তিদ্বারা মনঃসৃষ্টি বহুযুগের এক বিচিত্র-ব্যাপার। তাহার স্বষ্টিকাৰ্য্য অনবরত চুলিতেছে, কিন্তু এখনো সর্বত্ৰ যেন দানা বাঁধিয়া উঠে নাই। মাঝে মাঝে এক এক স্থানে যখন তাহ। পরিস্ফুট হইয়া উঠে, তখন চারিদিকের সহিত তাহার পার্থক্য অত্যন্ত বেশি বোধ হয় । বাংলাদেশে বিদ্যাসাগরকে সেইজন্য সাধারণ হইতে অত্যন্ত পৃথক দেখিতে হইয়াছে। সাধারণত আমরা-যে পরমার্থের প্রভাব একেবারেই অনুভব করি না, তাহা নহে ; মধ্যে মধ্যে বহুকাল গুমন্টের পর হঠাৎ একদিন ভিতর হইতে একটা আধ্যাত্মিক ঝড়ের বেগ আমাদিগকে স্বার্থ ও সুবিধা লজঘন করিয়া আরাম ও অভ্যাসের বাহিরে ক্ষণকালের জন্য আকর্ষণ করে, কিন্তু সে সকল দমকা-হাওয়া চলিয়া গেলে সে কথা আর মনেও থাকে না ; আবার সেই আহারবিহার-আমোদপ্রমোদের নিত্যচক্রের মধ্যে ঘুরিতে আরম্ভ করি। ইহার কারণ, মনোজীবন আমাদের মধ্যে পরিণতিলাভ করে নাই,- আগাগোড়া বাধিয়া যায় নাই । চেতনা ও বেদনার আভাস সে অনুভব করে, কিন্তু তাহার স্থায়িত্ব নাই। অনুভূতি হইতে কাৰ্য্যসম্পাদন পৰ্য্যন্ত অবিচ্ছেদ যোগ ও অনিবাৰ্য্য বেগ থাকে না । কাজের সহিত ভাবের ও ভাবের সহিত মনের সচেতন নাড়ী জালের সজীব বন্ধন স্থাপিত হয় নাই। র্যাহাদের মধ্যে সেই বন্ধন স্থাপিত হইয়াছে, র্যাহারা সেই দ্বিতীয়জীবন লাভ করিয়াছেন, পরমাৰ্থদ্বারা শেষ পৰ্য্যন্ত চালিত না হইয়া তাহাদের থাকিবার জো নাই। তাহাদের একটা দ্বিতীয় চেতনা আছে --সেচেতনার সমস্ত বেদনা আমাদের অনুভবের অতীত ।