পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিদ্যাসাগর চরিত V9) বিদ্যাসাগর সেই দ্বিতীয় চেতনা লইয়া সংসারে জন্মগ্রহণ করাতে তঁহার বেদনার অন্ত ছিল না । চারিদিকের অসাড়তার মধ্যে এই ব্যথিত বিশাল হৃদয় কেবল নিঃসহায়ভাবে, কেবল আপনার প্রাণের জোরে, কেবল আপনার বেদনার উত্তাপে একাকী আপন কাজ করিয়াছেন । সাধারণলোকের হিসাবে সে সমস্ত কাজের কোনো প্রয়োজন ছিল। না। তিনি কেবলমাত্র পাণ্ডিত্যে এবং বিদ্যালয়পাঠ্য-গ্রন্থবিক্রয়দ্বারা, ধন্যোপার্জনে সংসারে যথেষ্ট সম্মানপ্ৰক্তিপত্তি লাভ করিয়া যাইতে, পারিতেন । কিন্তু তাহার নিজের হিসাবে এ সমস্ত কাজের একান্ত, প্রয়ােজন ছিল ;-নতুবা তিনি যে,-অধিক-জীবন বহন করিতেন, সে জীবনের নিশ্বাসরোধ হইত। ;-তাহার ধনোেপাৰ্জন ও সম্মানলাভে, তাহাকে রক্ষা করিতে পারিত না । বাল্যবিধবার দুঃখে দুঃখবোধ আমাদের পক্ষে একটি ক্ষণিক ভাবোন্দ্রেক মাত্র। তাহাদের বেদনা আমাদের জীবনকে স্পর্শ করে না। কারণ, আমরা গতানুগতিক ; যেখানে দশজনের বেদনাবোধ নাই, সেখানে আমরা অচেতন। আমরা প্রকৃতরূপে, প্ৰত্যক্ষরূপে, অব্যবহিতরূপে, তাহদের বঞ্চিত জীবনের সমস্ত দুঃখ ও অবমাননাকে আপনার দুঃখ ও অবমাননারূপে অনুভব করিতে পারি না । কিন্তু ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগরকে আপন অতিচেতনার দণ্ডবহন করিতে হইয়াছিল । অভ্যাস, লোকাচার ও অসাড়তার পাষাণব্যবধান আশ্রয় করিয়া পরের দুঃখ হইতে তিনি আপনাকে রক্ষা করিতে পারেন নাই। এইজন্য আমরা যেমন ব্যাকুলভাবে আপনার দুঃখ মোচন করিতে চেষ্টা করিয়া থাকি, তিনি যেন তাহা অপেক্ষা অধিক প্ৰাণপণে দ্বিগুণতর প্রতিজ্ঞাসহকারে বিধবাগণকে অতলস্পর্শ অচেতন নিষ্ঠুরতা হইতে উদ্ধার করিতে করিয়াছিলেন । আমাদের