পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S চারিত্রিপূজা পক্ষে স্বাৰ্থ যেমন প্ৰবল, পরমার্থ তাহার পক্ষে ততোধিক প্ৰবল ছিল । এমন একটি দৃষ্টান্ত দিলাম। কিন্তু তাহার জীবনের সকল কাৰ্য্যেই দেখা গিয়াছে, তিনি যে চেতনারাজ্যে, যে মননিলোকে বাস করিতেন, আমরা তাহা হইতে বহুদূরে অবস্থিতু ; তাহার চিন্তা ও চেষ্টা, বুদ্ধি ও বেদনা গতানুগতিকের মত ছিল না, তাহ পারমাথিক ছিল । তাহার মত লোক পারমার্থিকতাত্ৰষ্ট বঙ্গদেশে জন্মিয়াছিলেন বলিয়া, চতুদিকের নিঃসাড়তার পাষাণখণ্ডে বারংবার আহত-প্রতিহত হইয়াছিলেন বলিয়া বিদ্যাসাগর তোহার কৰ্ম্মসংস্কুল জীবন যেন চিরদিন ব্যথিত ক্ষুব্ধভাবে যাপন করিয়াছেন। তিনি যেন সৈন্যহীন বিদ্রোহীর মতো তাহার চতুর্দিককে অবজ্ঞা করিয়া জীবনরণরঙ্গিভূমির প্রান্ত পৰ্য্যন্ত জয়ধ্বজ নিজের স্কন্ধে একাকী বহন করিয়া লইয়া গেছেন। তিনি কাহাকেও ডাকেন নাই, তিনি কাহারো সাড়াও পান নাই, অথচ বাধা ছিল পদে পদে। তাহার মননজীবী অন্তঃকরণ র্তাহাকে প্ৰবল আবেগে কাজ করাইয়াছিল, কিন্তু গত জীবন বহিঃসংসার তাহাকে আশ্বাস দেয় নাই । তিনি যে শব সাধনায় প্রবৃত্ত ছিলেন, তাহার উত্তরদায়কও ছিলেন তিনি নিজে । আধুনিক ইংলণ্ডে বিদ্যাসাগরের ঠিক উপমা পাওয়া যায় না। কেবল জনসনের সহিত কতকগুলি বিষয়ে তাহার অত্যন্ত সাদৃশ্য দেখিতে পাই। সে সাদৃশ্য বাহিরের কাজে ততটা নয়—কারণ, কাজে বিদ্যাসাগর জনসন অপেক্ষা অনেক বড় ছিলেন ; কিন্তু এই সাদৃশ্য অন্তরের সরল, প্রবল এবং অকৃত্ৰিম মনুষ্যত্বে । জনসনও বিদ্যাসাগরের ন্যায় বাহিরে রূঢ় ও অন্তরে সুকোমল ছিলেন ; জনসনও পাণ্ডিত্যে অসামান্য, বাক্যালাপে সুরসিক, ক্রোধে উদ্দীপ্ত, স্নেহরসে আর্দ্র, মতে নিৰ্ভীক, হৃদয়ভাবে অকপট এবং পরহিতৈষায় আত্মবিস্মৃত ছিলেন। দুব্বিষহ দারিদ্র্যও মুহূৰ্ত্তকালের জন্য র্তাহার আত্মসম্মান আচ্ছন্ন করিতে পারে নাই। সুবিখ্যাত্ত