পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VV) চারিত্রিপূজা আমরা সাধুভাব ও সদাচার দেখিতে পাই ; কিন্তু ভালোলোকের মধ্যেও এমন আদর্শ সচরাচর দেখিতে পাওয়া যায় না, র্যাহার জীবন প্ৰচলিত, লোকাচারের দ্বারা গঠিত নহে, অথবা র্যাহার হৃদয়বৃত্তি চিরাভ্যস্ত শিষ্টপ্রথার বাধা-খাল উদ্বেল করিয়া উঠিতে পারে। জনসনের চরিত্রের প্ৰতি আমাদের যে প্রীতি জন্মে, তাহার প্রধান কারণ, তাহার জীবন যে নেমি আশ্রয় করিয়া আবৰ্ত্তিত হইত, তাহা মহত্ত্ব, তাহ প্ৰথামাত্রের দাসত্ব নহে। * * * অ্যাডিসন দেখাইয়াছিলেন, খৃষ্টানের মরণ কিরূপ -কিন্তু তাহার জীবন আরামের অবস্থা ও ষ্টেটুসেক্রেটারির পদ এবং কাউণ্টেসের সহিত বিবাহের মধ্য দিয়া অতি অবাধে প্ৰবাহিত হইয়াছিল ; মাঝে মাঝে পোর্ট মদিরার অতিসেবন ছাড়া আর কিছুতেই তাহার নাড়ি ও তাহার মেজাজকে চঞ্চল করিতে পারে নাই। কিন্তু আর একজন কঠিন বৃদ্ধ তীর্থযাত্রী, যিনি অন্তর এবং বাহিরের দুঃখরাশিসত্ত্বেও যুদ্ধ করিয়া জীবনকে শান্তির পথে লইয়া গেছেন, যিনি এই সংসারের মায়ার হাটে উপহাসিত হইয়া মৃত্যুচ্ছায়ার অন্ধগুহামধ্যে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, এবং যিনি নৈরাশ্যদৈত্যের বন্ধন হইতে বহু চেষ্টায়, বহু কষ্টে উদ্ধার পাইয়াছিলেন, তাহার মৃত্যুশয্যায় আমাদের মনে গভীরতর ভাবাবেগ উচ্ছসিত হইয়া উঠে। যখন দেখিতে পাই, এই লোকের অন্তিমকালের হৃদয়বৃত্তি কিরূপ কোমল, গম্ভীর এবং সরল, তখন আমরা স্বতই অনুভব করি যে, যে-নিরীহ ভদ্রলোকটি পরম শিষ্টাচার রক্ষা করিয়া বঁাচিয়াছিলেন ও মরিয়াছিলেন, তাহার অপেক্ষা উন্নততর সত্তার সন্নিধানে বৰ্ত্তমান আছি ।” এই বর্ণনা পাঠ করিলে বিদ্যাসাগরের সহিত জনসনের সাদৃশ্য সহজেই মনে পড়ে। বিদ্যাসাগরও কেবল ক্ষুদ্র সঙ্কীর্ণ অভ্যস্ত ভব্যতার মধ্য দিয়া চলিতে পারেন নাই, তাহারও স্নেহ ভক্তিদয়া, তাহার বিপুল-বিস্তীর্ণ হৃদয় সমস্ত আদবাকায়দাকে বিদীর্ণ করিয়া কেমন অসামান্য আকারে