পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রিপূজা · ७ · উপরে সে যদি প্ৰভাববিস্তার করিতে না পারে, তবে ক্ষমতা প্ৰয়োগ করিবার যথেষ্ট উৎসাহ তাহার না থাকিবার কথা। এইজন্য স্বাতন্ত্র্যপ্রধান সমাজকে ক্ষমতাশালী লোকের কােছ হইতে কাজ আদায় করিবার জন্য সর্বদা বাহবা দিতে হয় ; যে দান করে, তাহার যেমন সমারোহ, যে গ্রহণ করে, তাহারও তেমনি অনেক আয়োজনের দরকার হয়। প্ৰত্যেক সমাজ নিজের বিশেষ প্ৰকৃতি এবং বিশেষ আবশ্যক অনুসারে নিজের নিয়মে নিজের কাজ-উদ্ধারে প্রবৃত্ত হয়। দাতা দান করিয়াই কৃতাৰ্থ, এই ভাবটার উপরেই আমরা অত্যন্ত ঝোক দিয়া থাকি ; আর গ্ৰহীতা গ্ৰহণ করিয়া কৃতাৰ্থ, এই ভাবটার উপরেই যুরোপ অধিক ঝোক দিয়া থাকে। স্বার্থের দিক দিয়া দেখিলে যে গ্ৰহণ করে, তাহারই গরজ বেশি, মঙ্গলের দিক দিয়া দেখিলে যে দান করে, তাহারই গরজ বেশি। অতএব আদশভেদে ভিন্ন সমাজ ভিন্ন পথ দিয়া নিজের কাজে যাত্রা করে । কিন্তু স্বার্থের উত্তেজনা মানবপ্ৰকৃতিতে মঙ্গলের উত্তেজনা অপেক্ষা সহজ এবং প্রবল, তাহাতে সন্দেহ নাই। অর্থনীতিশাস্ত্রে বলে, ডিমাণ্ড অনুসারে সাপ্লাই অর্থাৎ চাহিদা অনুসারে জোগান হইয়া থাকে। খরিদদারের তরফে যেখানে অধিক মূল্য হাঁকে, ব্যবসাদারের তরফ হইতে সেইখানেই অধিক মাল আসিয়া পড়ে। যে সমাজে ক্ষমতার মূল্য । বেশি, সেই সমাজেই ক্ষমতাশালীর চেষ্টা বেশি হইয়া থাকে, ইহাই সহজ স্বভাবের নিয়ম । কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষ বরাবর সহজ স্বভাবের নিয়মের উপর জয়ী হইবার চেষ্টা করিয়াছে। অর্থনীতিশাস্ত্ৰ অধিকাংশ জায়গাতেই খাটে, অথচ ভারতবর্ষে তাহা উলটুপালটু হইয়া যায়। ছোটোবড়ো সকল বিষয়েই ভারতবর্ষ মানবস্বভাবকে সহজ স্বভাবের উৰ্দ্ধে রাখিতে চেষ্টা করিয়াছে। ক্ষুধাতৃষ্ণা হইতে আরম্ভ করিয়া ধনমানসম্ভোগ পৰ্য্যন্ত কোনো বিষয়েই তাহার চালচলন। সহজরকম নহে। . আর০