পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চারিত্রপূজা কিছু না পায় তো অন্তত তিথিনক্ষত্রের দোহাই দিয়া সে আমাদের অত্যন্ত স্বাভাবিক প্ৰবৃত্তিগুলাকে পদে-পদে প্ৰতিহত করিয়া রাখে। এই দুঃসাধ্য কাৰ্য্যে সে অনেকসময় মৃঢ়তাকে সহায় করিয়া অবশেষে সেই মূঢ়তার দ্বারা নিজের সর্বনাশসাধন করিয়াছে। ইহা হইতে, তাহার চেষ্টার একান্ত লক্ষ্য কোন দিকে, অন্তত তাহা বুঝা যায়। দুৰ্ভাগ্যক্রমে মানুষের দৃষ্টি সঙ্কীর্ণ। এইজন্য তাহার প্রবল চেষ্টা এমন-সকল উপায় অবলম্বন করে, যাহাতে শেষকালে সেই উপায়ের দ্বারাতেই সে মারা পড়ে । সমস্ত সমাজকে নিষ্কাম মঙ্গলাকৰ্ম্মে দীক্ষিত করিবার প্রবল আবেগে ভারতবর্ষ অন্ধতাকেও শ্রেয়োজ্ঞান করিয়াছে। এ-কথা ভুলিয়া গেছে যে, বরঞ্চ স্বার্থের কাজ অন্ধভাবে চলিতে পারে, কিন্তু মঙ্গলের কাজ তাহ পারে না । সজ্ঞান ইচ্ছার উপরেই মঙ্গলের মঙ্গলত্ব প্ৰতিষ্ঠিত। কলেই হউক, আর বলেই হউক, উপযুক্ত কাজটি করাইয়া লইতে পারিলেই স্বার্থসাধন হয়, কিন্তু সম্পূর্ণ বিবেকের সঙ্গে কাজ না করিলে কেবল কাজের দ্বারা মঙ্গলসাধন হইতে পারে না । তিথিনক্ষত্রের বিভীষিকা এবং জন্মজন্মান্তরের সদগতির লোভদ্বারা মঙ্গলকাজ করাইবার চেষ্টা করিলে, কেবল কাজই করান হয়, মঙ্গল করান হয় না । কারণ, মঙ্গল স্বার্থের ন্যায় অন্য লক্ষ্যের অপেক্ষা করে না, মঙ্গলেই মঙ্গলের পূর্ণতা । কিন্তু বৃহৎ জনসমাজকে এক আদর্শে বাধিবার সময় মানুষের ধৈৰ্য্য থাকে না। তখন ফললাভের প্রতি তাহার আগ্ৰহ ক্ৰমে যতোই বাড়িতে থাকে, ততোই উপায়সম্বন্ধে তাহার। আর বিচার থাকে না। রাষ্ট্ৰহিতৈষী যে-সকল দেশের উচ্চতম আদর্শ, সেখানেও এই অন্ধত দেখিতে পাওয়া যায়। রাষ্ট্রহিতৈষার চেষ্টাবেগ যতোই বাড়িতে থাকে, ততোই সত্যমিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের বুদ্ধি তিরোহিত হইতে থাকে। ইতিহাসকে অলীক করিয়া, প্ৰতিজ্ঞকে লঙ্ঘন করিয়া, ভদ্রনীতিকে উপেক্ষা করিয়া, রাষ্ট্র