পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3. " ိမ် চারিত্রপূজা স্তম্পকে পূজা করিতেছিল ও পর্বতপ্রমাণ জড়িত্বের তলে পড়িয়া প্রতিদিন চেতন হারাইতেছিল। রামমোহন রায় সেই ভগ্নমন্দির ভাঙিলেন, সকলে বলিল, তিনি হিন্দুধৰ্ম্মের উপরে আঘাত করিলেন । কিন্তু তিনিই হিন্দুধৰ্ম্মের জীবনরক্ষা করিলেন । সমস্ত ভারতবর্ষ এইজন্য তাহার নিকটে কৃতজ্ঞ। কী সঙ্কটের সময়েই তিনি জন্মিয়াছিলেন। তাহার একদিকে হিন্দুসমাজের তটভূমি জীৰ্ণ হইয়া পড়িতেছিল, আর একদিকে বিদেশীয় সভ্যতাসাগরের প্রচণ্ডবন্যা বিদু্যদবেগে অগ্রসর হইতেছিল, রামমোহন রায় তাহার অটল মহত্ত্বে মাঝখানে আসিয়া দাড়াইলেন। তিনি যে বাধ নিৰ্ম্মাণ করিয়া দিলেন, খৃষ্টীয়বিপ্লব সেখানে আসিয়া প্ৰতিহত হইয়া গেল। সে সময়ে তাহার মতো মহৎ-লোক না জন্মাইলে এতদিন বঙ্গদেশে হিন্দুসমাজে এক অতি শোচনীয় মহাপ্লাবন উপস্থিত হইত। এইখানে রামমোহন রায়ের উদারতা সম্বন্ধে হয় তো দু’একটা কথা উঠিতে পারে। ভস্মস্তপের মধ্যে ঋষিদের হৃদয়জাত যে অমর-অগ্নি প্রচ্ছন্ন ছিল, ভস্ম উড়াইয়া দিয়া তিনি তাহাই বাহির করিয়াছেন । কিন্তু এত করিবার কি প্রয়োজন ছিল ? তাহার উত্তর এই—বিজ্ঞানদর্শনের ন্যায় ধৰ্ম্ম যদি কেবলমাত্ৰ জ্ঞানের বিষয় হইত, হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করিবার, লাভ করিবার, সঞ্চয় করিবার বিষয় না হইত, ধৰ্ম্ম যদি গৃহের অলঙ্কারের ন্যায়। কেবল গৃহভিত্তিতে দুলাইয়া রাখিবার সামগ্ৰী হইত, আমাদের সংসারের প্রত্যেক ক্ষুদ্র কাজের প্ৰবৰ্ত্তক-নিবাৰ্ত্তক না হইত, তাহা হইলে এরূপ না করিলেও চলিত । তাহা হইলে নানাবিধ বিদেশী অলঙ্কারে গৃহ সাজাইয়া রাখা যাইত। কিন্তু ধৰ্ম্ম নাকি হৃদয়ে পাইবার ও সংসারের কাজে ব্যবহার করিবার দ্রব্য, দূরে রাখিবার নহে, এই-- জন্যই স্বদেশের ধৰ্ম্ম স্বদেশের জন্য বিশেষ উপযোগী । ব্ৰহ্ম সমস্ত জগতের ঈশ্বর, কিন্তু তিনি বিশেষরূপে ভারতবর্ষেরই ব্ৰহ্ম। অন্য কোনো দেশের লোকে তঁাহাকে ব্ৰহ্ম বলিয়া জানে না, ব্ৰহ্ম বলিতে আমরা ঈশ্বরকে