পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S a চারিত্রিপূজা হয়,-আমাদের পিতৃদেবের জীবনের সমস্ত সত্য, সমস্ত মঙ্গল, সমস্ত প্ৰেম তোমার মধ্যে অনির্বাচনীয়রূপে পরিপূর্ণ হইয়াছে, ইহা জানিয়া আমরা ভ্ৰাতভগিনীগণ করজোড়ে তোমার জয়োচারণ করিতেছি। পৃথিবীতে অধিকাংশ সম্বন্ধই দানপ্ৰতিদানের অপেক্ষ রাখে-কিন্তু পিতামাতার স্নেহ প্ৰতিদানপ্ৰত্যাশার অতীত। তাহ পাপ, অপরাধ, কদৰ্য্যতা, কৃতঘ্নতা, সমস্তকেই অতিক্রম করিয়া আপনাকে প্রকাশ করে। তাহা ঋণ নহে, তাহ দান । তাহা আলোকের ন্যায়, সমীরণের ন্যায়তাহা শিশুকাল হইতে আমাদিগকে নিয়ত রক্ষা করিয়াছে, কিন্তু তাহার মূল্য কেহ কখনো চাহে নাই। পিতৃস্নেহের সেই অযাচিত, সেই অপৰ্য্যাপ্ত মঙ্গলের জন্য, হে বিশ্বপিতঃ, আজ তোমাকে প্ৰণাম করি। আজ প্রায় পঞ্চাশবৎসর অতীত হইল, আমাদের পিতামহের মৃত্যুর পরে এই গৃহের উপরে সহসা ঋণরাশিভারাক্রান্ত কী দুর্দিন উপস্থিত হইয়াছিল, তাহা সকলেই জানেন । পিতৃদেব একাকী বহুবিধ প্ৰতিকুলতার মধ্যে দুস্তর ঋণসমুদ্র সন্তরণপূর্বক কেমন করিয়া যে কুলে উত্তীর্ণ হইয়াছিলেন-ই-আমাদের অন্তকার অন্নবস্ত্রের সংস্থান কেমন করিয়া যে তিনি ধ্বংসের মুখ হইতে বঁাচাইয়া আমাদের জন্য রক্ষা করিয়াছেন, আজ তাহা আমাদের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। সেই ঝঙ্কার ইতিহাস আমরা কি জানি । কতকাল ধরিয়া তাহাকে কী দুঃখ, কী চিন্তা, কী চেষ্টা, কী দশাবিপৰ্য্যয়ের মধ্য দিয়া প্রতিদিন, প্রতিরাত্রি যাপন করিতে হইয়াছে, তাহা মনে করিতে গেলে শরীর কণ্টকিত হয়। তিনি অতুল বৈভবের মধ্যে লালিতপালিত হইয়াছিলেন-অকস্মাৎ ভাগ্যপরিবর্তনের সম্মুখে কেমন করিয়া তিনি অবিচলিত বীৰ্য্যের সহিত দণ্ডায়মান হইলেন! যাহারা অপৰ্য্যাপ্ত ধনসম্পদ ও বাধাহীন ভোগসুখের মধ্যে মানুষ হইয়া উঠে, দুঃখসংঘাতের অভাবে, বিলাসলালিত্যের সংবেষ্টনে বাল্যকাল হইতে যাহাঁদের শক্তির চর্চা অসম্পূর্ণ, সঙ্কটের সময় তাহদের মতো অসহায় কে