পাতা:চারিত্রপূজা (১৯৩০) - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

38 চারিত্রিপূজা সত্য হইতে যেন স্বলিত না হই, ধৰ্ম্ম হইতে যেন স্বলিত না হই, কুশল হইতে যেন স্থলিত না হই! পৃথিবীতে কোনো পরিবার কখনই চিরদিন একভাবে থাকিতে পারে নাম-ধন ও খ্যাতিকে কোনো বংশ চিরদিন আপনার মধ্যে বদ্ধ করিয়া রাখিতে পারে না-ইন্দ্ৰধনুর বিচিত্র বর্ণচ্ছটার ন্যায় এই গৃহের সমৃদ্ধি নিশ্চয়ই একদিন দিগন্তরালে বিলীন হইয়া যাইবে, ক্ৰমে নানা ছিদ্ৰযোগে বিচ্ছেদবিশ্লেষের বীজ প্ৰবেশ করিয়া কোন একদিন এই পরিবারের ভিত্তিকে শতধা বিদীর্ণ করিয়া দিবে।-- কিন্তু এই পরিবারের মধ্য দিয়া যিনি অচেতন সমাজকে ধৰ্ম্মজিজ্ঞাসায় সজীব করিয়া দিয়াছেন, যিনি নূতন ইংরাজিশিক্ষার ঔদ্ধত্যের দিনে শিশু বঙ্গভাষাকে বহু যত্নে কৈশোরে উত্তীৰ্ণ করিয়া দিয়াছেন, যিনি দেশকে তাহার প্রাচীন ঐশ্বৰ্য্যের ভাণ্ডার উদঘাটিত করিতে প্ৰবৃত্ত করিয়াছেন, যিনি র্তাহার তপঃপরায়ণ একলক্ষ্য জীবনের দ্বারা আধুনিক বিষয়লুব্ধ সমাজে ব্ৰহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থের আদর্শ পুনঃস্থাপিত করিয়া গিয়াছেন, তিনি এই পরিবারকে সমস্ত মনুষ্যপরিবারের সহিত সংযুক্ত করিয়া-দিয়া, ইহার সর্বোচ্চ লাভকে সমস্ত মনুষ্যের লাভ করিয়া-দিয়া, ইহার পরম ক্ষতিকে সমস্ত মনুষ্যের ক্ষতি করিয়া-দিয়া আমাদিগকে যে গৌরব দান করিয়াছেন, অন্য সমস্ত ক্ষুদ্র মানমাৰ্য্যাদা বিস্মৃত হইয়া অদ্য আমরা তাহাঁই স্মরণ করিব ও একান্ত ভক্তির সহিত তাহার নিকটে আপনাকে প্ৰণত করিয়া দিব ও র্যাহার মধ্যে তিনি আশ্রয়লাভ করিয়াছেন, সমস্ত ধনমানের উৰ্দ্ধে, খ্যাতিপ্ৰতিপত্তির উৰ্দ্ধে তাহাকেই দর্শন করিব । হে বিশ্ববিধাতা, আজ আমাদের সমস্ত বিষাদ-অবসাদ দূর করিয়া দাও-মৃত্যু সহসা যে যবনিকা অপসারণ করিয়াছে, তাহার মধ্য দিয়া তোমার অমৃতলোকের আভাস আমাদিগকে দেখিতে দাও ! সংসারের নিয়ত উত্থানপতন, ধনমানজীবনের আবির্ভাব্যতিরোভাবের মধ্যে তোমার “আনন্দ রূপমমৃতং” প্ৰকাশ কর। কত বৃহৎ সাম্রাজ্য ধূলিসাৎ হইতেছে,