পাতা:চারিত্রপূজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮
চারিত্রপূজা

নিম্নলিখিত বর্ণনা প্রকাশ করিয়াছেন—

 জননীদেবী সাহেবের ভােজন-সময়ে উপস্থিত থাকিয়া তাঁহাকে ভােজন করাইয়াছিলেন। তাহাতে সাহেব আশ্চর্যান্বিত হইয়াছিলেন যে, অতিবৃদ্ধা হিন্দুস্ত্রীলােক সাহেবের ভােজন-সময়ে চিয়ারে উপবিষ্ট হইয়া কথাবার্তা কহিতে প্রবৃত্ত হইলেন।••• সাহেব হিন্দুর মতো জননীকে ভূমিষ্ঠ হইয়া মাতৃভাবে অভিবাদন করেন। তদনন্তর নানা বিষয়ের কথাবার্তা হইল। জননীদেবী প্রবীণ হিন্দুস্ত্রীলােক, তথাপি তাঁহার স্বভাব অতি উদার, মন অতিশয় উন্নত, এবং মনে কিছুমাত্র কুসংস্কার নাই। কি ধনশালী কি দরিদ্র, কি বিদ্বান্ কি মূর্খ, কি উচ্চজাতীয় কি নীচজাতীয়, কি পুরুষ কি স্ত্রী, কি হিন্দুধর্মাবলম্বী কি অন্যধর্মাবলম্বী, সকলেরই প্রতি সমদৃষ্টি।

 শম্ভুচন্দ্র অন্যত্র লিখিতেছেন—

 ১২৬৬ সাল হইতে ৭২ সাল পর্যন্ত ক্রমিক বিস্তর বিধবা কামিনীর বিবাহকার্য সমাধা হয়। ঐ-সকল বিবাহিত লােককে বিপদ হইতে রক্ষার জন্য অগ্রজমহাশয় বিশেষরূপ যত্নবান ছিলেন। উহাদিগকে মধ্যে মধ্যে আপন দেশস্থ ভবনে আনাইতেন। বিবাহিতা ঐ-সকল স্ত্রীলােককে যদি কেহ ঘৃণা করে, এ কারণে জননীদেবী ঐ-সকল বিবাহিতা ব্রাহ্মণজাতীয়া স্ত্রীলােকের সহিত একত্র এক পাত্রে ভােজন করিতেন।

 অথচ তখন বিধবাবিবাহের আন্দোলনে দেশের পুরুষেরা বিদ্যাসাগরের প্রাণসংহারের জন্য গােপনে আয়ােজন করিতেছিল, এবং দেশের পণ্ডিতবর্গ শাস্ত্র মন্থন করিয়া ক যুক্তি এবং ভাষা মন্থন করিয়া কটুক্তি বিদ্যাসাগরের মস্তকের উপর বর্ষণ করিতেছিলেন। আর, এই রমণীকে কোনাে শাস্ত্রের কোনাে শ্লোক খুঁজিতেই হয় নাই; বিধাতার স্বহস্তলিখিত শাস্ত্র তাঁহার হৃদয়ের মধ্যে রাত্রিদিন উদ্ঘাটিত ছিল। অভিমন্যু জননী-জঠরে থাকিতে যুদ্ধবিদ্যা শিখিয়াছিলেন, বিদ্যাসাগরও বিধিলিখিত সেই মহাশাস্ত্র মাতৃগর্ভবাসকালেই অধ্যয়ন করিয়া আসিয়াছিলেন।

 আশঙ্কা করিতেছি, সমালােচক মহাশয়েরা মনে করিতে পারেন যে, বিদ্যাসাগরসম্বন্ধীয় ক্ষুদ্র প্রবন্ধে তাঁহার জননী সম্বন্ধে এতখানি আলােচনা