পাতা:চারিত্রপূজা - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮০

মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

পূজনীয় পিতৃদেবের আজ অষ্টাশীতিতম সাংবৎসরিক জন্মােৎসব। এই উৎসবদিনের পবিত্রতা আমরা বিশেষভাবে হৃদয়ের মধ্যে গ্রহণ করিব।

 বহুতর দেশকে সঞ্জীবনম্পর্শে উর্বর করিয়া, পুণ্যধারায় বহুতর গ্রামনগরীর পিপাসা মিটাইয়া, অবশেষে জাহ্নবী যেখানে মহাসমুদ্রের প্রত্যক্ষসম্মুখে আপন সুদীর্ঘ পর্যটন অতলস্পর্শ শান্তির মধ্যে সমাপ্ত করিতে উদ্যত হন, সেই সাগরসংগমস্থল তীর্থস্থান। পিতৃদেবের পূতজীবন অদ্য আমাদের সম্মুখে সেই তীর্থস্থান অবারিত করিয়াছে। তাঁহার পুণ্যকর্মরত দীর্ঘজীবনের একাগ্রধারা অদ্য যেখানে তটহীন সীমান্য বিপুল বিরামসমুদ্রের সম্মুখীন হইয়াছে সেইখানে আমরা ক্ষণকালের জন্য নতশিরে স্তব্ধ হইয়া দণ্ডায়মান হইব। আমরা চিন্তা করিয়া দেখিব, বহুকাল পূর্বে একদিন স্বর্গ হইতে কোন্ শুভ সূর্যকিরণের আঘাতে অকস্মাৎ সুপ্তি হইতে জাগ্রত হইয়া কঠিন তুষারবেষ্টনকে অশ্রুধারায় বিগলিত করিয়া এই জীবন আপন কল্যাণযাত্রা আরম্ভ করিয়াছিল —তখন ইহার ক্ষীণ স্বচ্ছ ধারা কখনাে আলােক কখনাে অন্ধকার— কখনাে আশা কখনাে নৈরাশ্যের মধ্য দিয়া দুর্গম পথ কাটিয়া চলিতেছিল। বাধা প্রতিদিন বৃহদাকার হইয়া দেখা দিতে লাগিল— কঠিন প্রস্তরপিণ্ডসকল পথরােধ করিয়া দাঁড়াইল— কিন্তু সে-সকল বাধায় স্রোতকে রুদ্ধ না করিতে পারিয়া দ্বিগুণবেগে উদ্‌বেল করিয়া তুলিল— দুঃসাধ্য দুর্গমতা সেই দুর্বার বলের নিকট মস্তক নত করিয়া দিল। এই জীবনধারা ক্রমশ বৃহৎ হইয়া, বিস্তৃত হইয়া, লােকালয়ের মধ্যে অবতরণ করিল; দুই কূলকে নবজীবনে অভিষিক্ত করিয়া চলিল; বাধা মানিল না, বিশ্রাম করিল না, কিছুতেই তাহাকে লক্ষ্য হইতে বিক্ষিপ্ত করিয়া দিল না— অবশেষে আজ