পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্যেই আজ সকাল বেলায় কোণে বসে বসে আমার পশ্চিমের পথ পরিষ্কার করতে লেগে গেছি। তোমার বাবার চিঠিতেই খবর পেয়েছি, নানা ব্যাঘাতে এবার দেওয়ালির ছুটিতে তোমার আসা হল না।" আসতে পারলে খুব খুসি হতুম সে কথা তুমি নিশ্চয় জন। কিন্তু আমার পণ এই যে, যেটা ইচ্ছা করি সেটা যখন না ঘটে তখন ধরে নিই আমার ঠাকুরের ইচ্ছাই ফলল। তার ইচ্ছাকেই খুব সহজে গ্রহণ করবার জন্যে মনকে প্রস্তুত রেখে দিই। নিজের মুখরা ইচ্ছাটাকে নিয়ে নিজের ভাগ্যের সঙ্গে, হাত পা নেড়ে, গলা চড়িয়ে, কোদল করতে আমার ভারি লজ্জা করে। নিজের ইচ্ছাটাকেই যেমন তেমন করে জয়ী করবার চেষ্টা করতে গিয়েই সংসারে যত অনর্থ ঘটে— এ কথা বেশ জানি অথচ মাঝে মাঝে ভুলে যাই। কিন্তু ভুললে চলবে না— ঐ ইচ্ছার দাসত্ব করিয়ে জীবনটাকে রাস্তায় ঘাটে যেখানে সেখানে হয়রান করে বেড়ানোর মত প্রাণের এমন অপব্যয় আর কিছু নেই। যা কাজ তা করব কিন্তু কুলি মজুরের মত ঘণ্টায় ঘণ্টায় তার মজুরী দাবী করব না। করতে হবে— বন্ধু ত খোরাকী চায় না, মাইনে চায় না। যদি কথায় কথায় বলতে থাকি আমার ইচ্ছা পূরণ করে দাও তাহলেই ত মজুরী চাওয়া হল। মজুর মাইনে দাবী করতে পারে কিন্তু প্রভুর সঙ্গে এক আসনের দাবী করতে পারে না ত। ঐ এক আসনের অংশের পরেই আমার লক্ষ্য। সেইজন্যে সংসারে ইচ্ছার দাবী নিষ্ফল হলে হেসে উড়িয়ে দিতে চাই— সব সময়ে জোর থাকে না— কিন্তু তাই বলে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। নিজের ইচ্ছার উপরে নিজে যদি কৰ্ত্তা হতে পারি তাহলেই বিশ্বের যিনি কৰ্ত্তা তার সঙ্গে যোগ দিতে পারি। নইলে দাসের দশা কোনোদিন ঘুচবে না; আর দাসের মুস্কিল এই যে, তাকে দরজার পাশে দূরে দাড়িয়ে থাকতে হয়। আমি পাশে বসবার নিমন্ত্রণের অপেক্ষায় আছি— )のひ