পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এতক্ষণ পরে আমি দুপুর বেলায় যখন খেয়ে এসে বসলুম তখন বৃষ্টি সুরু করে দিয়েছে। পূবে হাওয়ার কি নৃত্য, জলধারার ওড়না উড়িয়ে দিয়েছে এক মাঠ থেকে আর এক মাঠে। আর তার কলসঙ্গীতে আকাশে কোথাও যেন ফ্লাক রইল না। নববর্ষার জলস্থলের আনন্দ উৎসব যদি দেখতে চাও তাহলে এস আমাদের মাঠের ধারে— বস এই জানলাটিতে চুপ করে। পাহাড়ে বর্ষার চেহারা স্পষ্ট দেখবার জো নেই— সেখানে পাহাড়েতে মেঘেতে ঘেঁষাৰ্ঘেষি মেশামেশি একাকার কাণ্ড— সমস্ত আকাশটা বুজে যায়— সৃষ্টিটা যেন সন্দিতে কাশীতে জবুস্থলু হয়ে কম্বলমুড়ি দিয়ে পড়ে থাকে। পাহাড় আমার কেন ভাল লাগে না বলি– সেখানে গেলে মনে হয় আকাশটাকে যেন আড়কোলা করে ধরে একদল পাহারাওয়ালার হাতে জিম্বা করে দেওয়া হয়েচে– সে একেবারে আষ্টে পৃষ্ঠে বাঁধা। আমরা মৰ্ত্তবাসী মানুষ, সীমাহীন আকাশে আমরা মুক্তির রূপটি দেখতে পাই— সেই আকাশটাকেই যদি তোমার হিমালয় পাহাড় একপাল মহিষের মত শিং গুতিয়ে মারতে চায় তাহলে সেটা আমি সইতে পারিনে। আমি খোলা আকাশের ভক্ত— সেইজন্যে বাংলা দেশের বড় বড় দিল-দরাজ নদীর ধারে অবাধ [অবারিত]’ আকাশকে ওস্তাদ মেনে তার কাছে আমার গানের গলা সেধে এসেচি এই কারণেই দূর হতে তোমাদের সোলন পৰ্ব্বতকে নমস্কার করি। যা হোক বর্ষা বিদায় হবার পূৰ্ব্বেই তোমরা আমার প্রাস্তরে আতিথ্য নেবে শুনে আমি খুসি হয়েচি। তোমাদের জন্যে কিছু গান সংগ্রহ করে রাখব— আর পাকা জাম, আর কেয়া ফুল, আর পদ্মবন থেকে শ্বেতপদ্ম— আর যদি পারি গোটাকতক আষাঢ়ে গল্প। অতএব খুব বেশি দেরী কোরোনা, পৰ্ব্বত থেকে ঝরনা যেমন নেমে আসে তেমনি দ্রুতপদে নেমে এস। ইতি আষাঢ়স্য তৃতীয় দিবসে। ১৩২৬ তোমার ভানুদাদা > ○>