পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

করচি এমন সময়ে তোমার এই চিঠি। আজ তোমার কাছে আমাকে হার মানতে হল। আমি এত বড় লেখক, বড় বড় পাঁচ ভলুম কাব্যগ্রন্থ লিখেচি, গান লিখেচি হাজার খানেক, মাসিকপত্রে প্রবন্ধ লিখেচি কত তার সংখ্যা নেই, গল্প লিখেচি ঝুড়ি ঝুড়ি, নাটক লিখেচি কম নয়, তারপরে গদ্য বই যা জমেচে তাতে একখানা পুরো মালগাড়ির ট্রেন বোঝাই হতে পারে, তার পরে ইংরেজি বইও শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে গড়গড় শব্দে এগিয়ে চলেচে— এ হেন যে আমি— যার উপাধিসমেত নাম হওয়া উচিত শ্রীরবীন্দ্রনাথ শৰ্ম্ম রচনালবণাম্বুধি, কিম্বা সাহিত্য অজগর, কিম্বা বাগক্ষৌহিনীনায়ক, কিম্বা রচনা-মহামহোপদ্রব, কিম্বা কাব্য “কলা”কল্পদ্রুম, কিম্বা ফস করে এখন মনে পড়চে না পরে ভেবে বলব— রাণুর মত সাধনা করতে হবে, তারই কাছে পরাভব— 2 goals to nil । তার পরে আবার তুমি যে সব বিপজ্জনক ভ্রমণবৃত্তান্ত লিখচ আমার এই ডেস্কে বসে তার সঙ্গে পাল্লা দিই কি করে? আজ সকালে তাই ভাবছিলুম, পারুলবনের সামনে দিয়ে যে রেলের রাস্তা আছে সেখানে গিয়ে রাত্রে দাড়িয়ে থাকব— তার পরে বুকের উপর দিয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেণটা চলে গেলে পর যদি তখনো হাতে [য] চলে তাহলে সেই মুহূৰ্ত্তে সেইখানে বসে তোমাকে যদি চিঠি লিখতে পারি তবে তোমাকে টেক্কা দিতে পারব। এ সম্বন্ধে এখনো বউমার সঙ্গে পরামর্শ করি নি, এণ্ডজ সাহেবকেও জানাই নি। আমার কেমন মনে মনে সন্দেহ হচ্চে ওঁরা হয়ত কেউ সম্মতি দেবেন না। তাছাড়া আমার নিজের মনেও একটা কেমন ধোঁকা লাগচে– মনে হচ্চে যদি গাড়িটার চাপে বুড়ো আঙুলটা কিছু জখম করে তাহলে হয় ত লেখা ঘটেই উঠবে না— আর যদি না ঘটে তাহলে অনস্তকালের মত ঐ দুখানা চিঠির জিৎ তোমার রয়েই যাবে। অতএব থাক্। অল্পদিনের মধ্যে আমাদের এখানে ভয়ঙ্কর ব্যাপার একটাও ঘটেনি। >○8