পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঝড়বৃষ্টি অল্পস্বল্প হয়েচে কিন্তু তাতে আমাদের বাড়ির ছাত ভাঙে নি। আমাদের কারো মাথায় যে সামান্য একটা বজ্র পড়বে তাও পড়ল না। বন্দুক নিয়ে ছোরা ছুরি নিয়ে দেশের নানা জায়গায় ডাকাতি হচ্চে কিন্তু আমাদের এমনি অদৃষ্ট মন্দ যে আজ পয্যন্ত অবজ্ঞা করে আমাদের আশ্রমে তারা কিম্বা তাদের দূর সম্পর্কের কেউ পদার্পণ করলে না। না, না, ভুল বলচি। একটা রোমহর্ষণ ঘটনা অল্পদিন হল ঘটেছে। সেটা বলি। আমাদের আশ্রমের সামনে দিয়ে নির্জন প্রাস্তরের প্রান্ত বেয়ে একটি দীর্ঘপথ বোলপুর স্টেশন পর্য্যস্ত চলে গেছে। সেই পথের পশ্চিমে একটি দোতলা ইমারত। সেই ইমারতের একতলায় একটি বঙ্গীয় রমণী একাকিনী বাস করেন। তার ডাক নাম মীরা। সঙ্গে কেবল কয়েকটি দাসদাসী বেহারা গোয়ালা পাচক ব্রাহ্মণ এবং উপরের তলায় এভুজ সাহেব নামক একটি ইংরেজ থাকেন— সমস্ত বাড়িটাতে এছাড়া আর জনপ্রাণী নেই। সেদিন মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি মেঘের আড়াল থেকে চন্দ্র মান কিরণ বিকীর্ণ করচেন। এমন সময় রাত্রি যখন সাড়ে এগারোটা— যখন কেবলমাত্র দশ বারোজন লোক নিয়ে একাকিনী রমণী বিশ্রাম করচে এমন সময়ে ঘরের মধ্যে কে ঐ পুরুষ প্রবেশ করলে ? কোন অপরিচিত যুবক ? কোথায় ওর বাড়ি, কি ওর অভিসন্ধি ? হঠাৎ সেই নিভন্ধ নিদ্রিত ঘরের নিঃশব্দতা সচকিত করে তুলে সে জিজ্ঞাসা করলে “ইস্কুল কোথায় ?" অকস্মাৎ জাগরণে মীরা নাম্নী রমণীর ঘন ঘন হৃৎকম্প হতে লাগল— রুদ্ধপ্রায় কষ্ঠে বললে, “ইস্কুল ঐ পশ্চিম দিকে।" তখন যুবক জিজ্ঞাসা করলে, “হেডমাস্টারের ঘর কোথায়?” মীরা বললে, “জানি নে।” তার পরে দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ। এই যুবক সেই স্নান জ্যোৎস্নালোকে সেই ঝিল্লিমুখরিত মধ্যরাত্রে আবার আশ্রমের কঙ্করবিকীর্ণ পথে আশ্রমকুকুরবৃন্দের তার-তিরস্কার শব্দ উপেক্ষা করে কমলা নামধারিণী একটি একাকিনী রমণীর গৃহের মধ্যে প্রবেশ করলে। সেই ঘরে তৎকালে উক্ত রমণীর পূর্ণবয়স্ক একটি স্বামীমাত্র ছিল, আর ᎼᏬ☾