পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

এরি মধ্যে ফস করে তোমাকে দু চার লাইন লিখে দিচ্চি। শিলঙে থাকতেই তোমার জন্যে সেখানকার তৈরি একটা বস্ত্ৰ খণ্ড কিনেছিলুম— পাঠাবার সুবিধা না হওয়াতে এতদিন পড়ে ছিল। এইবার এখান থেকে পাঠাচ্চি। এটা তোমার কি কাজে লাগবে জানি নে, হয় ত জামা তৈরি হতে পারবে, নয় ত মাথার পাগড়ি, নয়ত কোমর বন্ধ, নয় ত টেবিলের ঢাকা, নয় ত হাবলার মায়ের সাড়ি। যাই হোক এটা হারিয়ো না, এর পরে অনেক দিন বাদে, পয়তাল্লিশ কিম্বা উনসত্তর বছর পরে হঠাৎ ঐটে দেখে তোমার মনে পড়বে ভানুদাদা বলে কোনো একজন কোনো এক জায়গায় কোনো এককালে বৰ্ত্তমান ছিল ;– হয়ত তার নাকের ডগাটা, কিম্বা পায়ের গোড়ালিটা কিম্বা কনুয়ের কোনটা, কিম্বা কড়ে আঙুলের আগাটা খুব অল্প অল্প মনে আসবে— স্পষ্ট মনে পড়বে না তার দাড়ি ছিল কি ছিল না, কিম্বা সে লম্বা কি বেটে, কিম্বা সে কালো কি গৌরবণ, কিন্তু এটা হয়ত মনে পড়বে যে, সে সাতাশ বছর কিছুতেই পার হতে পারে নি, আর তাকে নামতার কোঠা জিজ্ঞাসা করলে সে বলত তিন-নাম পয়তাল্লিশ । আজ মেঘ করে টিপটিপ বৃষ্টি পড়চে– এই শীতের বৃষ্টি বয়স্ক পুরুষের কান্নার মত— দেখলে রাগ ধরে। আজই আমার সেই মাঠের বাড়িতে উঠে যাবার কথা আছে— কিন্তু এই রকম ছিচকাদুনে দিনে কোথাও নড়তে ইচ্ছা করে না। যদি কাল রোদুর ওঠে তবেই যাব, নচেৎ আজ দিনুবাবুর সেই দোতলা ঘরে চুপচাপ গম্ভীর হয়ে বসে থাকব। সাধুচরণ এখনো আমার চা এনে দিলে না— নিশ্চয় সে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমচে। ডিসেম্বরে যখন তুমি আসবে তখন তাকে খুব বকে দিয়ো। ইতি ? [২৮] কাৰ্ত্তিক ১৩২৬। ভানুদাদা > 8br