পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উপরকার আকাশে সন্ধাতারা আমার জন্যে অপেক্ষা করে থাকৃত; আর প্রতিবেশী ছিল চক্রবাকের দল, তাদের কলালাপ থেকে আর কিছু বুঝি বা না বুঝি এটুকু জানতুম আমার সম্বন্ধে কোনো জনরব তারা রটাত না— এমন কি, আমার জয় পরাজয় নামক গল্পের নায়ক নায়িকার পরিণাম সম্বন্ধে তারা লেশমাত্র কৌতুহল প্রকাশ করত না। যা হোক, তে হি নো দিবসা গতাঃ। এখন বোলপুরের শুষ্কন্ধুসর মাঠের মধ্যে বসে ইস্কুলমাষ্টারি করচি, ছেলেগুলোর কলরব চক্রবাকের কলকোলাহলকে ছাড়িয়ে গেচে । তুমি মনে কোরো না, এখানে কোনো স্রোত নেই; এখানে অনেকগুলি জীবনের ধারা মিশে একটি সৃষ্টির স্রোত চলেচে, তার ঢেউ প্রতি মুহূৰ্ত্তে উঠচে, তার বাণীর অন্ত নেই। সেই স্রোতের দোলায় আমার জীবন আন্দোলিত হচ্চে, সে তার আপনার পথকে কাট্‌চে, দুই তটকে গড়ে তুলচে— সে কোন এক অলক্ষ্য মহাসমুদ্রের দিকে চলেচে, দূর থেকে আমরা তার বাৰ্ত্তার আভাস পাই মাত্র। আমি ছোট একটি নাটক লিখতে আরম্ভ করেচি “ যদি শীঘ্ৰ শেষ করতে পারি তাহলে হয় ত কলকাতায় । তার অভিনয় দেব। কাশীতে আমার যাওয়ার সঙ্কল্প ত আমি ত্যাগ করিনি । তবে কিনা আমাদের মত লোক অনাহূত হয়ে কোথাও যেতে পারিনে— এই জন্যে হিন্দু য়ুনিভার্সিটি থেকে যথোপযুক্ত সাদর আমন্ত্রণের অপেক্ষায় ভন্ধ হয়ে আছি,— আমাদের আদর অভ্যর্থনার যা যা দরকার— মালা চন্দন ধূপ দীপ নৈবেদ্য ইত্যাদি— সমস্ত যেন প্রস্তুত থাকে— একটা রসনচৌকি যেন বাজে; আর আহারের ফৰ্দ্দটা এবারকার চিঠিতে দিলুম না, কেননা পূৰ্ব্বেকার একটা চিঠিতে সংক্ষেপে দিয়েছিলেম— অর্থাৎ সামান্যমত কালিয়া পোলাও কোপ্তা কোম্ম কাবাব ঘণ্ট চচ্চড়ি ভাজা দই ক্ষীর লুচি সন্দেশ ইত্যাদি তাছাড়া পৌষমাসে পিঠা চাই। ইতি ২২শে পৌষ ১৩২৮ ভানুদাদা ১৭২