পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কারণ আমার ঘড়ি বন্ধ। বন্ধ না থাকলেও যে ঠিক সময় পাওয়া যেত তা নয়— তুমি আমার সেই ঘড়ির পরিচয় জানো। এইটুকু বলতে পারি— কিছুকাল পূৰ্ব্বেই একখানা পরোটা ডাল ও তরকারী সংযোগে আহার করে লিখতে বসেচি। রৌদ্র প্রখর, শরতের শাদা মেঘ ভরে স্তরে আকাশের যেখানে সেখানে স্ফীত হয়ে পড়ে আছে, বাইরে থেকে শালিখ পাখীর গোরুর গাড়ি চলেচে, আমার ডানদিকের দক্ষিণের জানলা দিয়ে কচিধানের ক্ষেতের প্রান্তে সুদূর তাল গাছের শার যে] দেখা যাচ্চে, তন্দ্ৰালয় ধরণীর দীর্ঘনিশ্বাসটি নিয়ে আতপ্ত হওয়া ধীরে ধীরে আমার পিঠে এসে লাগচে। এরকম দিনে কাজ করতে ইচ্ছে করে না, এই মেঘগুলোর মতই অকেজো হাওয়ায় মনটা বিনাকারণে দিগন্ত পার হয়ে ভেসে যেতে চায়। জানলার বাইরে মাঝে মাঝে যখন চোখ ফেরাই তখন মনে হয় যেন সুরবালকেরা স্বগের পাঠশালা থেকে গুরুমশায়কে না বলে পালিয়ে এসেচে— আকাশের এ কোণ ও কোণ থেকে সবুজ পৃথিবীর দিকে তারা উকি মারচে, হাওয়ায় হাওয়ায় তাদের কানাকানি শুনে আমার মনটাও উতলা হয়ে দৌড় মারবার মতলব করচে। কিন্তু আমরা যে পৃথিবীর ভারাকর্ষণের টানে বাঁধা— মাটি আমাদের পা জড়িয়ে থাকে, কিছুতেই ছাড়তে চায় না। অতএব মনের একটা ভাগ জানলার বাইরে দিয়ে যতই উড়তে থাকে, আর একটা ভাগ ডেস্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পত্ররচনায় ব্যস্ত। দূরে কোথাও যদি যাবার ব্যবস্থা হয়— মনটাকে রেলভাড়ার কথা ভাবতে হয়, দেবতার মত শরতের মেঘের ' উপর চড়ে মালতী-সুগন্ধী হাওয়ার হিল্লোলে বেণুবনের পাতায় পাতায় দোল খেয়ে খেয়ে বিনাব্যয়ে ভ্রমণ করে বেড়াতে পারে না। এ ঘরে বসে লিখচি পাশের ঘরে একটি উড়িষ্যাদেশবাসী অতিথি অপেক্ষা করে আছে। লোকটি এম এ পাস করা, নন্‌ কে অপরেশনের ধাকায় বেকার অবস্থার ভাটার টানে ভেসে পড়েচে। আমার কাছ থেকে १» ¢