পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখি। আধুনিক গানের মধ্যে যাকে “আমার দেশ” বলে সুর তান লয়ে গৌরব করে থাকি এ জায়গাটি তারই মধ্যে, কিন্তু রামকেলী কিম্বা ভৈরবী সুরে যদি এই শব্দটাকে বসাবার ভার আধুনিক কবির উপর পড়ে তাহলে নিশ্চয় তার কলম ভেঁাতা হবে, তার তানপুরার তার ছিড়ে যাবে। এক হতে পারে পাখোয়াজের বোলের মধ্যে “তেরে কেটে মেরে কেটে প্রাঙ্গধা।” যা হোক এই রকম সব দুর্ণামধারী জায়গায় কবিকে ঘুরে বেড়াতে হচ্চে। হয়রান হয়ে গেচি— যাকে তোমাদের হিন্দীতে বলে, থক্‌ গয়া। প্রাঙ্গধা থেকে আজ রাত্তিরে যাব “মোরবি" শব্দটা তেমন শ্রুতিকটু নয় বটে কিন্তু ওর অর্থটা একটুও ভাল নয়। “মোরবি” যারা নাম রেখেছিল তারা না হয় “বাচবি” নাম রাখত তাতে দোষ কি ছিল ? তবে যদি বল নামকরণকারী ধ্যানযোগে আমার আজকালকার অবস্থা চিন্তা করেছিল, তাহলে বলতেই হবে লোকটার অসাধারণ ভবিষ্যৎ দৃষ্টি ছিল। যে-জংসন দিয়ে মোরবিতে যেতে হয় তার নাম বাধা-বান (Wadhawan)। পথিকদের এরকম করে আগে থাকতে ভয় দেখাবার কি দরকার ছিল ? নামের মধ্যেও ত একটা ভদ্রতা থাকা উচিত— নামটা “বাধাহীন" হয়ে কাজে না হয় বাধাবান হ’ত ? মনে কর আমার উপর যদি তোমার প্রীতি কিছুই না থাকে তাহলে কি নাম সই করবার বেলায় লিখবে অপ্রীতি ? কিম্বা আমি স্নান হয়ে পড়েচি বলেই কি ভানু না বলে’ নিজেকে ভাণু বলব ? আমার এই চিঠি জবাব-নিরপেক্ষ চিঠি। আমি এখন অঠিক-ঠিকানী। পোষ্ট আফিসের হাত এড়িয়ে এড়িয়ে চলেচি, চিঠি সম্বন্ধে এখন আমি অপ্রতিগ্রহী; চিঠি দিতে পারব কিন্তু নিতে পারব না। এতএব তোমাকে এ চিঠি দান করেও অঋণী করে দিলুম। এখন তোমার চিঠি লেখার দায় অনেক বেড়ে গেচে— অতএব তোমার চিঠির ধারাকে দুই বেণীতে বিভক্ত করা সঙ্গত হবে না। १९€)