পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মত বেরিয়ে এসে অন্ধকারতর অনিৰ্দ্দেশ্যের অভিমুখে পাখার ঝাপট দিয়ে চলে যায়। চিঠিপত্রের মধ্যে তাদের বাসা বাঁধতে দেওয়া কিছুতেই ভালো নয়। অতএব চিঠি বন্ধ করা যাক, কেরোসিন প্রদীপটা নিবিয়ে দেওয়া যাক, ঝপ করে বিছানাটার মধ্যে গিয়ে পড়া যাক। শীত,— বেশ একটু রীতিমত শীত,— উত্তর পশ্চিমের দিক থেকে হিমেল হাওয়া বইচে । দেহটা বলে উঠচে, “ওহে কবি, আর বাড়াবাড়ি ভালো নয়— তোমার বাজে কথার কারবার বন্ধ করে’ মোটা কম্বলটা মুড়ি দিয়ে একবার চক্ষু বোজো সহচর-– তাই বলেই কি আমাকে এত দুঃখ দিতে হবে? দেখচ না, পা দুটো কি রকম ঠাণ্ডা হয়ে এসেচে, আর মাথাটা হয়েচে গরম, বুঝচ না কি এটা তোমার রাত্রিকালের উপযোগী মন্দাক্রাস্তা ছন্দের যতিভঙ্গের লক্ষণ— এ সময়ে মস্তিষ্কের মধ্যে শাৰ্দ্দলবিক্রীড়িতের অবতারণ করা কি প্রকৃতিস্থ লোকের কৰ্ম্ম ?” কায়ার এই অভিযোগ শুনে তার প্রতি অনুরক্ত আমার মন বলে উঠচে, “ঠিক, ঠিক! একটুও অত্যুক্তি নেই।” ক্লাস্ত দেহ এবং উদ্রান্ত মন উভয়ের সম্মিলিত এই বেদনপূর্ণ আবেদনকে আর উপেক্ষা করতে পারিনে— অতএব চললুম শুতে— প্রভাত হয়েচে। তুমি আমাকে বড় চিঠি লিখতে অনুরোধ করেচ। সে অনুরোধ পালন করা আমার সহজ-স্বভাবসঙ্গত নয়, পল্লবিত করে পত্র লেখার উৎসাহ আমার একটুও নেই। আমি কখনো মহাকাব্য লিখিনে বলে আমার স্বদেশী অনেক পাঠক আমাকে অবজ্ঞা করে থাকেন,— মহাচিঠিও আমি সচরাচর লিখতে পারি নে। কিন্তু যেহেতু আমার চীনপ্রয়াণের সময় নিকটবর্তী এবং তখন আমার চিঠি অগত্যা যথেষ্ট বিরল হয়ে আসবে সেইজন্যে আগামী অভাব পূরণ করবার উদ্দেশ্যে বড় চিঠি লিখচি। সে অভাব যে অত্যন্ত গুরুতর অভাব, এবং সেটা পূরণ করবার আর কোনো উপায় নেই এটা কল্পনা করচি নিছক অহঙ্কারের জোরে। কিন্তু অহঙ্কার Հ8Գ