পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যাই সেখানে ঘুরে এল, দেখলে সেখানেও আমি নেই। লীলমণির কাছে খবর নিতে গেল। হাক দিল, লীলমণি, লীলমণি! কোথাও তার সাড়া পেল না। শেষ কালে খবর পেলে চিঠির মালেক কলকাতায় চলে এসেচে, আর সঙ্গে এসেচে তার সবেধন লীলমণি। তখন পোষ্ট্রব্যাগের মধ্যে দ্বিতীয়বার প্রবেশ করলে আর জোড়াসাকোয় আমার দক্ষিণহস্তের উপর অবতরণ করলে। এক ম্যালেরিয়া নিবারিণী সভা হয়েচে তাদের বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষ্যে সভাপতির আসন গ্রহণ করব বলে কিছুকাল পূৰ্ব্বে কথা দিয়েছিলেম। তাই দায়ে পড়ে এই ক্লান্ত রুগ্ন দেহ টেনে টেনে কলকাতায় এসেচি। ম্যালেরিয়া সভায় বক্তৃতা করে এসেচি’ যে, ম্যালেরিয়া রোগটা ভাল জিনিষ নয়— ওর সঙ্গে প্রেমের সম্বন্ধ পাতিয়ে শ্ৰীমতী ম্যালেরিয়াকে অদ্ধাঙ্গিনী করবার চেষ্টা করলে ও দেখতে দেখতে সৰ্ব্বাঙ্গিনী হয়ে ওঠে। সাধারণত প্রেয়সীরা হৎকমলে স্থান গ্রহণ করে থাকেন কিন্তু শ্ৰীমতী ম্যালেরিয়া হচ্চেন যকৃৎবাসিনী, প্লীহাবিনোদিনী। কবিরা বলে থাকেন প্রেয়সীর আবির্ভাবে হৃদয়ে ঘন ঘন স্পন্দন উপজাত হয়, কিন্তু ম্যালেরিয়ার আবির্ভাবে সৰ্ব্বাঙ্গ মুহুর্মুহু স্পন্দিত হতে থাকে। অবশেষে অত্যন্ত তিক্ত উপায়ে তার বিচ্ছেদ ঘটাতে হয়। কিন্তু তার সঙ্গে একবার মিলন হলে বারে বারে সে ফিরে ফিরে আসে। তাই আমি করুণকণ্ঠে সানুনয়ে সকলকে অনুরোধ করে বলেছিলেম, “ভদ্রমহিলাগণ এবং ভদ্রলোক সকল, ধৰ্ম্মের নামে, দেশের নামে, সৰ্ব্বমানবের নামে আমি আপনাদের নিবেদন করচি, কদাচ আপনারা ম্যালেরিয়াকে প্রশ্রয় দেবেন না, আপনাদের প্লীহা ও যকৃতকে কদাচ তার চরণে উৎসর্গ করবেন না। আর যদি কখনো শোনেন মশা কানের কাছে মৃদুমন্দ গুঞ্জনধ্বনি করচে তবে তার সেই মায়ায় ভুলবেন না, যদি দেখেন সে আপনাদের চরণাশ্রয় গ্রহণ করেচে তবে নিৰ্ম্মমভাবে এক চপেটাঘাতে তাকে বিনাশ করতে কুষ্ঠিত হবেন না। উত্তিষ্ঠত, জাগ্রত, প্রাপ্য ডাক্তারাণ নিবোধত।” আমার সেই সারগর্ভ চিন্তপূর্ণ T} & & О