পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জাহাজ ছাড়বে। পথটা অনেকদূর পর্যন্ত খুব গরম হবে। তার পর যখন চীনের উত্তর অংশে যাব তখন আবার ঠাণ্ডা পাব। পথে সমুদ্রের উপর বেশ বিশ্রাম করতে পারব | ঢেউয়ের দোলায় আমাকে আজকাল আর দুঃখ দেয় না। প্রথম যখন সমুদ্রের পরিচয় পেয়েছিলুম তখন সেটা একবারেই সুখকর হয় নি। তিনদিন এত বেশি কষ্ট হয়েছিল যে যদি জাহাজ ডুবত তা হলে আমি উদ্বিগ্ন হতুম না। গেলবারে জাপানে যাবার সময় বঙ্গোপসাগরে প্রলয় ঝড়ের দোলা খেয়েও আমি কাতর হই নি - বাইরের দোলায় আমাকে কাবু করে না বটে কিন্তু ভিতরে যাত্রিদের গোলমাল, আর তাদের সঙ্গে চব্বিশ ঘণ্টা জটলা করে থাকা, আমার পক্ষে ভারি অসহ্য। সিঙ্গাপুর পর্যন্ত আমরা ইংরিজি জাহাজে যাব— অতএব ঐ কটা দিন ইংরেজের সঙ্গে ঘেষাৰ্ঘেষি করতেই হবে। ইংরেজের উপর আমার কোন রাগ নেই কিন্তু এসিয়ার গরম হাওয়ায় যাদের মেজাজ একেবারে পাকা রকমে গরম হয়ে গেচে তাদের কাছে গেলে সাত হাত দূর থেকেই গায়ে যেন কড়া আঁচ লাগতে থাকে। কিন্তু জাপানী জাহাজে ভারি আরাম। ওরা এত ভদ্র, আমাকে এত যত্ন করেছিল, এবারেও আমাকে ওদের জাহাজে নিয়ে যাবার জন্যে এত আগ্রহ করচে, যে ওদের জাহাজে আমি যেন মান্য অতিথির মত থাকতে পাব। আরবারে জাহাজের কাপ্তেন আমাকে তার নিজের নাবার ঘর ছেড়ে দিয়েছিল— ডেকের উপরে যেখানে যেমন করে খুসি বসে লেখাপড়া করতে পারতুম। ইংরেজের জাহাজে সে সম্ভাবনামাত্র নেই। ক্রমে গরম পড়ে আসচে। ক্ষণে ক্ষণে মনের ভিতরটাতে বসন্তকালের ডাক এসে পেচিচ্ছে। এমন এই জোড়াসাঁকোর গলিতেও তার স্পর্শ যেন রক্তের মধ্যে নাড়া দিয়ে যায়। এখন কি চীনে যেতে একটুও ইচ্ছে করে ? এই রোদুরের রংটা আমার চোখেতে কি রকম নেশা লাগায়। চিরদিনই কি আমার এইরকমই চলবে? ছেলেবেলাতেই এই অপরূপের স্পর্শ যেরকম ૨G (.