পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরের জানলার কাছে বসে তার প্রথম কয়েকটা পাতা লিখেছিলুম। মনে আছে তোমাকে ঘর থেকে কতবার তাড়া করেচি। কিন্তু খুব বেশিবার নয়। কেবল চার পাতা মাত্র লিখেছিলুম— তার বেশি আর এগোতে দাও নি। তুমি যেমন, তেমনি তোমার একটি জুড়ি আছে সে থাকে আমার মস্তিষ্কের ভিতরে— সেটি হচ্চে আমার কবিতা, আমার গান। সেও যখন জানে আমি চীনের লেকচার লিখতে বসেচি অমনি বন্ধ দরজা ঠেলে ডাক দেয়, “কবি!”— আমি বলি– “থাক, এখন থাক, ব্যস্ত আছি।" সে আবার বলে, “কবি, একবার দরজা খোলো, আমি একটুখানি থেকেই চলে যাব।” তখন দিই দরজাটা খুলে— তার পরেই সে আমার মনটি দখল করে বসে, আর গুনগুন তার গুঞ্জন চলতে থাকে। সে তার কথা রক্ষা করে, একখানা গান হতেই সে চলে যায়। কিন্তু চলে গেলে হবে কি, মাথার মধ্যে গুনগুন থামতে চায় না— চীনের লেকচারটার আর উপায় থাকে না। আসল কথা, বসস্তের আরম্ভ কালে এই সব গম্ভীর কাজ করা বড় শক্ত । অন্য সময়ে যে পাগলটাকে ভদ্রতার ছদ্মবেশে প্রচ্ছন্ন করে রাখি, এই সময়টা সে আর বাঁধন মানতে চায় না। সে বলে আমি অত্যন্ত ভদ্রলোকটির মত আমার কৰ্ত্তব্য কাজ করব না, চিঠি পেলে চিঠির জবাব দেবনা, লোক দেখা করতে এলে মধুর স্মিত হাস্যে তাকে অভ্যর্থনা করবনা, লীলমণি যখন এসে বলবে স্নানের ঘরে গরম জল দিয়ে এসেচি তাকে তাড়া করে যাব। কিন্তু পাগলটাকে তার অজ্ঞাতবাস থেকে ছুটি দিয়ে একেবারে ছাড়া দিতে সাহস হয় না। তাহলে সভ্যলোকেরা অবাক হয়ে যাবে, বলবে, রবিঠাকুরের এই দশাঃ কাজেই জামার সব কটা বোতাম আটবার চেষ্টা করি, আর, কি কি উপায়ে মানুষের সদগতি হয় সেই সাধু প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞাসা করলে, খুব গম্ভীরভাবে তার সদযুক্তিপূর্ণ উত্তর দিয়ে থাকি। এইগুলোই হচ্চে নিজের যথার্থ পরিচয় গোপন করা— কবিঠাকুরকে রবিঠাকুর করে প্রমাণ করা! २७8