পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তিন মোটর গাড়ি বোঝাই করে বেরলুম। দুই ধারে কোথাও ঘন অরণ্য, কোথাও রবর গাছের চাষ, মাঝে মাঝে চিনেদের পাড়া, কোথাও বা মালয়দের গ্রাম। এত ঘন গাছপালা কোথাও দেখা যায় না। তার কারণ এখানে প্রায় সম্বৎসর বৃষ্টি হয়। ঘন সবুজ। নীল মেঘে আকাশ আচ্ছন্ন। সেই মেঘের ছায়া এখানকার অরণ্যের ছায়ার সঙ্গে যেন মালাবদল ও গ্রন্থিবন্ধনের উৎসবের মত দেখাচ্ছিল— শ্যামল পৃথিবীর আকাশের মিলন। অপরাহুে এই নিবিড় ধূসর ছায়া খুব ভাল লাগছিল। অনেকদিন এমন মেঘের ঘটা দেখি নি। ভারতবর্ষ থেকে বেরবার আগে বহুকাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বৃষ্টির জন্যে শূন্যের দিকে তাকিয়ে তার শুষ্কতপ্ত দিন কাটাচ্ছিল। কিন্তু আকাশ যেন দরিদ্র হয়ে গিয়েছিল। কোথাও মেঘের বা রসের লেশ ছিল না] | কুমারসম্ভবের কথা মনে পড়ছিল। আকাশ যেন শিবেরই মত রুদ্র তপস্যায় আত্মবিস্মৃত। তার তৃতীয় নেত্রের আগুনের তাপ তখনো দিকে দিক {য} ঝলক দিচ্ছিল। আর পৃথিবীও গৌরীর মত তপস্যায় প্রবৃত্ত হয়েছিল— আমাদের আশ্রমের গাছগুলোর পাতা প্রায় হলুদ] হয়ে এসেছিল— পৃথিবী যেন অপর্ণ হবারই উদ্যোগ করছিল। জানিনে এতদিনে রুদ্রতাপতপ্ত তপস্বিনীর কঠোর সাধনা সফল হয়েচে কিনা। শেষ পৰ্য্যস্ত দেখে এসেছিলেম তাপের সঙ্গে তাপের সংঘাত। তাই এখানে যখন আকাশে ঘন ঘোর মেঘে বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল তখন সেই বনভূমির মাঝখান দিয়ে সেই সমারোহ দেখতে দেখতে মন ভরে উঠছিল। যখন সহরের প্রায় কাছাকাছি এসেচি এমন সময় কি ঘোর বৃষ্টি। একেবারে অবিরল ধারা। এমন বৃষ্টি কতদিন দেখি নি। কি ভালো লাগল বলতে পারি নে। ভিজে গেলুম কিন্তু তাতে দুঃখ রইল না। তার পরে এই সহরে এসে পৌঁচেছি। এখনি আবার দুঘণ্টার মোটর রাস্তা ভেঙে আবার জাহাজে উঠতে চলুম। পশু সিঙ্গাপুরে পৌছব। তাড়াতাড়ি এই ঘনবর্ষণের খবরটা পাঠিয়ে দিচ্চি তোমার ভানুদাদা ՀԳ 9