পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরেই দেখতে পাবে চীন থেকে বিশ্বভারতীর ছাত্র শাস্তিনিকেতনে চলেচে– ওখান থেকেও ছাত্র এবং আচার্য এখানে আসচে। আমাদের শাস্ত্রীমশায়কে দু বছরের জন্যে এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় পাঠিয়ে দেব স্বীকার করেছি— শুনে এরা উৎসাহ প্রকাশ করে আমাদের ধন্যবাদ দিয়েচে । এখানকার একজন ছাত্র এমেরিকায় অধ্যয়নের জন্য ছাত্রবৃত্তি পেয়েছিল সে তার ছাত্রবৃত্তি ত্যাগ করেছে— সে স্থির করেচে শাস্তিনিকেতনে গিয়ে সংস্কৃত, পালি, বৌদ্ধশাস্ত্র প্রভৃতি অধ্যয়ন করবে। এখন থেকেই দিনরাত সে ক্ষিতিবাবুর সঙ্গে লেগে রয়েচে। সংস্কৃত ব্যাকরণ পড়তে আরম্ভ করেচে তার নিষ্ঠার অন্ত নেই, ব্যাকরণ তার হাতে সৰ্ব্বদাই আছে। ছোট ছোট সংস্কৃতবাক্য তৈরি করবার চেষ্টা করে। যেমন তার বুদ্ধি তেমনি অধ্যবসায়। গেল বারে কাশীতে যখন ছিলুম তখন বিরলা আমাদের আশ্রমে বিশ হাজার টাকা দান করেছিলেন – সেই টাকা দিয়ে ওখানে এসিয়াবাসী ছাত্র ও যাত্রীদের জন্যে বাড়ি তৈরি করতে বলে দিয়েচি। নইলে, এখন যে রকম স্থানাভাব তাদের কোথায় রাখব? তোমরা হলে হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র— দশ বিশ লাখ টাকার কম কোনো অঙ্ক মুখে উচ্চারণ করতে তোমাদের লজ্জা হয়। আমাদের গরীব আশ্রমে বিশ হাজার টাকার ধরমশালার প্রভাব শুনে বোধ হয় তোমাদের ভয়ঙ্কর এক চোট হাসি পাবে। তা হেসো কিন্তু জেনো উপকরণ প্রাচুর্য দিয়ে প্রাণবান জিনিষ তৈরি হয় না, অমৃত দিয়েই হয়। সেই অমৃত যদি আমাদের সাধনাৱ মধ্যে থাকে তাহলে আমাদের দারিদ্র্যের নগ্নতার থেকেই ঐশ্বর্য প্রকাশিত হবে। মেঘের আড়ম্বরে দিনের আলোক উজ্জ্বল হয় না— রিক্ত মেঘের উপকরণবিরলতার ভিতর দিয়েই সত্যের সূর্য আপন মহিমা বিত্তার করে। সেই মহিমার দিকেই আমরা লক্ষ্য রাখব। আজ রাত্রে পিকিন ছেড়ে যাব । ভারতবর্ষ ছাড়ার পর আজ প্রথম তোমার চিঠি পেলুম। পিকিনে পৌছবার আগে পর্যন্ত খুব ব্যস্ততার মধ্যেও ২৮৭