পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমিও যা জানতুম ভুলে গেছি। তাই দুজনে মিলে উপরে আমার ছাদের সামনেকার বারান্দায় এসে বসলুম। দেখতে দেখতে ঘন বৃষ্টি নেমে এল— জলে বাতাসে মিলে আকাশময় তোলপাড় করে বেড়াতে লাগল— আমার ছাতের সাম্নেকার পেপে গাছটার লম্বা পাতাগুলোকে ধরে ঠিক যেন কানমলা দিতে লাগল। শেষকালে বৃষ্টি প্রবল হয়ে গায়ে যখন ছাঁট লাগতে আরম্ভ হল, তখন আমার সেই কোণটাতে এসে আশ্রয় নিলুম। এমন সময় চোখ ধাদিয়ে কড়কড় শব্দে প্রকাণ্ড একটা বাজ পড়ল। আমার মনে হল বাগানের মধ্যেই কোথাও পড়েচে। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গিয়ে দেখি হরিচরণ পণ্ডিতের বাসার দিকে ছেলেরা ছুটচে। সেই বাড়িতেই বাজ পড়েছিল। তখন তার বড় মেয়ে উনানে দুধ জ্বাল দিচ্ছিলেন। তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়লেন। ছেলেরা দূর থেকে দেখতে পেলে চালের উপর থেকে ধোয়া উড়তে আরম্ভ হয়েচে । তারা ত সব চালের উপর চড়ে জল জল করে চীৎকার করতে লাগল। ছেলেরা কুয়ো থেকে জল ভরে ভরে এনে চালের আগুন নিবিয়ে ফেল্লে। ভাগ্যে, হরিচরণের বাড়ির কাউকে আঘাত লাগে নি। কেবল হরিচরণের মেয়ের হাত একটু পুড়ে ফোসকা পড়েছিল। কিন্তু সব চেয়ে ভাল লেগেছিল আমার ছেলেদের উদ্যোগ দেখে। তাদের না আছে ভয় না আছে ক্লান্তি। নিৰ্ভয়ে হাতে করে করে চলের খড় ছিড়ে ছিড়ে ফেলে দিতে লাগল, আর দূরের কুয়ো থেকে দৌড়ে দৌড়ে সার বেঁধে জল ভরা ঘড়া এনে উপস্থিত করতে লাগল। ওরা যদি না দেখত এবং না এসে জুট্ৰত তা হলে মন্ড একটা অগ্নিকাণ্ড হত। এমনি করে কাল অনেকরাত্ৰি পৰ্য্যন্ত ঝড়বাদল হয়ে আজ অনেকটা ঠাণ্ডা আছে। আকাশ এখনো মেঘে লেপে আছে– হয়তো আজও বিকেলে একচেটি বৃষ্টি সুরু হবে। যাই হোক আজ তেমন গরম নেই বলে আজ দুপুর বেলায় বিশ্রাম না করলেও তেমন ক্লাস্তি হবে না। বৌমা এখনো আমাকে রঙীন কাগজ আনিয়ে দেন নি তাই আমার সেই ছোট কাগজেই লিখচি। কিন্তু যাই বল ৩২