পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৫ আশ্বিন ১৩৩৭ ৰালিন কল্যাণীয়াসু আশা, রাশিয়া ঘুরে এসে আজ আমেরিকার মুখে চলেচি এমন সন্ধিক্ষণে তোমার চিঠি পেলুম। রাশিয়ায় গিয়েছিলুম ওদের শিক্ষাবিধি দেখবার জন্যে। দেখে খুবই বিস্মিত হয়েছি। আট বছরের মধ্যে শিক্ষার জোরে সমস্ত দেশের লোকের মনের চেহারা বদলে দিয়েছে। যারা মূক ছিল তারা ভাষা পেয়েচে, যারা মূঢ় ছিল তাদের চিত্তের আবরণ উদঘাটিত, যারা অক্ষম ছিল তাদের আত্মশক্তি জাগরুক, যারা অবমাননার তলায় তলিয়ে ছিল, আজ তারা সমাজের অন্ধ কুটুরি থেকে বেরিয়ে এসে সবার সঙ্গে সমান আসন পাবার অধিকারী। এত প্রভূত লোকের যে এত দ্রুত এমন ভাবান্তর ঘটতে পারে তা কল্পনা করা কঠিন। এদের এককালের মরা গাঙে শিক্ষার প্লাবন বয়েচে দেখে মন পুলকিত হয়। দেশের একপ্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত সচেষ্ট সচেতন। এদের সামনে একটা নূতন আশার বীথিকা দিগন্ত পেরিয়ে অবারিত— সৰ্ব্বত্র জীবনের বেগ পূর্ণমাত্রায়। এরা তিনটে জিনিষ নিয়ে অত্যন্ত ব্যস্ত আছে। শিক্ষা, কৃষি এবং যন্ত্র। এই তিন পথ দিয়ে এরা সমস্ত জাতি মিলে চিত্ত, অন্ন এবং কৰ্ম্মশক্তিকে সম্পূর্ণতা দেবার সাধনা করচে। আমাদের দেশের মতোই এখানকার মানুষ কৃষিজীবী। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষি একদিকে মূঢ় আর এক দিকে অক্ষম, শিক্ষা এবং শক্তি দুই থেকেই বঞ্চিত। তার একমাত্র ক্ষীণ আশ্রয় হচ্চে প্রথা— পিতামহের আমলের চাকরের মতো, সে কাজ করে কম অথচ কর্তৃত্ব করে বেশি। তাকে মেনে চলতে হলে তাকে এগিয়ে চলবার উপায় থাকে না। অথচ শত শত বৎসর থেকে সে খুঁড়িয়ে চলচে। ۲۵- ۹