পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আমলকীগাছের পাতাগুলিকে ঝরঝরিয়ে দিয়ে বাতাস বয়ে যাচ্চে, তার মধ্যে একটা আলস্যের সুর বাজচে, আর বৃষ্টিতে ধোওয়া রোদুরটি যেন সরস্বতীর বীণার তারগুলি থেকে বেজে ওঠা গানের মত সমস্ত আকাশ ছেয়ে ফেলেচে। আমার ঠিক চোখের উপরেই সন্তোষ বাবুর বাড়ীর দিয়ে বোলপুর যাবার রাঙা রাস্তাটা চলে গেছে ঠিক যেন একটি সোনালী সবুজ সাড়ির রাঙা পাড়ের মত। তোমরা যে অগস্ত্যকুণ্ডের মধ্যে রয়েচ সেখানে প্রকৃতিকে এত বড় করে বিচিত্র করে সুন্দর করে দেখতে পাও না। খুব ছেলেবেলা থেকেই এই বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে আমার গলাগলি ভাব— তাই আমার জীবনের কতকালই নদীর নির্জন চরে কাটিয়েচি। তারপরে কতদিন গেছে এখানকার নির্জন প্রাস্তরে। তখন এখানে বিদ্যালয় ছিল না, তখন শান্তিনিকেতনের বাড়ির গাড়ি বারান্দায় বসে খুব বৃহৎ একটি নিন্ডন্ধতার মধ্যে ডুবে যেতে পারতুম,— রাত্রে ঐ বারান্দায় যখন শুয়ে থাকতুম তখন আকাশের সমস্ত তারা যেন আমার পাড়াপড়সির মত তাদের জানলা থেকে আমার মুখের দিকে চেয়ে কি বলত, তাদের কথা শোনা যেত না কিন্তু তাদের মুখ চোখের হাসি আমাকে এসে স্পর্শ করত। বিশ্বপ্রকৃতির সঙ্গে ভাব করার একটা মস্ত সুবিধা এই যে, সে আনন্দ দেয় কিন্তু কিছু দাবী করে না; সে তার বন্ধুত্বকে ফাসের মত করে বেঁধে ফেলতে চেষ্টা করে না, সে মানুষকে মুক্তি দেয়, তাকে দখল করে নিতে চায় না। মানুষের লোভ আছে, আসক্তি আছে, নানারকম প্রবৃত্তি আছে, এই সেজন্য সে কেবলি অধিকার স্থাপন করতে ব্যস্ত; অন্য মানুষকে সে রেখে দিতে চায়। এই জন্যে অধিকাংশ স্থলেই তার ভালবাসা মোহের ভিতর দিয়ে দুঃখের সৃষ্টি করে এবং দুঃখ পায়— কেবলি সে আপনার ংশের হিসাব করে, এবং চোখে চোখে আগলে রাখতে চায়, এতে 8ፄ