পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফণিভূষণ সপরিবারে প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের আলিপুর অবজারভেটরির মেয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে, রাজকীয় ভোজের খরচ দিয়েছিলেন নিজেরাই। রবীন্দ্রনাথ স্পষ্টই বুঝতে পারছিলেন, সামাজিক যে-সব অসুবিধা স্যার রাজেনদের ভোগ করতে হয়েছিল তার জন্য তারা তাকেই দায়ী করেছেন। এই অবস্থায় তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন বিবাহনুষ্ঠানে যাবেন না, কিন্তু রাণু দুঃখ পেতে পারেন ভেবে শেষ পর্যন্ত কলকাতায় এসেছেন, কিন্তু কী-ধরনের মানসিক অস্থিরতার মধ্যে দিন কাটিয়েছেন তার বিবরণ পাওয়া যায় ইন্দিরা দেবী চৌধুরানীর 'রোজনামচা বা দৈনিক লিপি'-তে। বিবাহের পরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে রাণুর যোগসূত্র ক্ষীণ হয়ে আসে। তার পরেও রাণুকে লেখা রবীন্দ্রনাথের চল্লিশটি চিঠি পাওয়া গেছে, কিন্তু তার আকারও যেমন ছোটো হয়ে এসেছে, আগেরকার চিঠির মাধুর্যও সেখানে অনুপস্থিত। একথা ঠিক, সংসার, সস্তান ও ধনী ইঙ্গবঙ্গ পরিবারের জীবনযাত্রা নিয়ে রাণু তখন অন্য জগতের অধিবাসিনী, রবীন্দ্রনাথও বাধক্যের ভারে পীড়িত— কিন্তু উভয়ের সম্পর্ক যে অন্য মাত্রা লাভ করেছে তাতে সন্দেহ নেই। এই পর্বে রাণুর জ্যেষ্ঠা ভগিনী আশা রবীন্দ্রনাথের অনেক কাছে এসেছেন। তাদের উভয়ের পত্র যা পাওয়া গেছে তা সংখ্যায় খুবই কম। কিন্তু অন্তত ফণিভূষণকে লেখা পত্রে আশার প্রসঙ্গ যেটুকু আছে, তাতে বুঝতে অসুবিধা হয় না এই বিদুষী কন্যাটিকে বিশ্বভারতীর ছাত্রী ও কর্মী হিসেবে পেতে রবীন্দ্রনাথ খুবই আগ্রহী ছিলেন। তার ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছিল, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। বিশ্বভারতীর অভ্যন্তরীণ রাজনীতির চাপে আশা ও তার স্বামী আরিয়ামকে আশ্রম ত্যাগ করতে হয়, তারা গান্ধীজির বুনিয়াদী শিক্ষার কার্যক্রমে যুক্ত হন। রবীন্দ্রনাথের ইচ্ছা ছিল, যেন তারা আবার বিশ্বভারতীর কাজে ফিরে আসেন— কিন্তু তার সেই প্রত্যাশা পূর্ণ হয় নি। 6toёt»