পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছেলেদের পড়াই সে ত দায়ে পড়ে নয়, সে নিজের ইচ্ছায়— অতএব এ রকম কাজ করতে পারা ত সৌভাগ্য। কিন্তু তবু এক একবার দরজার ফাকের ভিতর দিয়ে এই সবুজ পৃথিবীর একটা আভাস যখন দেখতে পাই তখন মনটা উতলা হয়ে ওঠে। আমি যে জন্মকুড়ে। যেমন বাঁশির ফাকের ভিতর থেকে সুর বেরোয় তেমনি আমার কুঁড়েমির ভিতর থেকেই আমার যেটি আসল কাজ সেইটি জেগে ওঠে। আমার সেই আসল কাজই হচ্চে বাণীর কাজ— সময়টাকে কৰ্ত্তব্য দিয়ে ভরাট করে একেবারে নিরেট করে দিলে বাণী চাপা পড়ে যায়। সেই জন্যেই আমাকে কেবল কাজ থেকে নয়, সংসারের নানা জটিল বন্ধন থেকে যথাসম্ভব মুক্ত থাকতে হয়। কাজই হোক, আর মানুষই হোক আমাকে একেবারে চাপা দিলে বা বেঁধে ফেলে আমার জীবন ব্যর্থ হতে থাকে। আমার মন ওড়বার জন্যে শূন্যকে চায়। তাকে খাচায় বাঁধবার আয়োজন যতবার হয়েচে ততবারই সেই আয়োজনের শিকল ছিন্ন হয়ে পড়ে গেছে। হঠাৎ একদিন দেখতে পাবে আমার কাজকৰ্ম্মের দাড়খানা তার শিকল নিয়ে কোথায় পড়ে আছে, আর আমি অত্যুচ্চ অবকাশের আগ্ৰডালের উপর অসীম র্যাকার মধ্যে একলা বসে গান জুড়ে দিয়েচি। তাই বলচি দরজা জানলার আড়াল থেকে ঐ নীলে সবুজে সোনালিতে মেশানো ফাকার একটা অংশ যেমনি দেখতে পাই অমনি আমার মন এই ডেস্কের ধার থেকে বলে ওঠে ঐখানেই ত আমার জায়গা— ঐ ফাকাটাকে যে আমার আনন্দ দিয়ে গান দিয়ে ভরে তুলতে হবে। পুকুর আছে মাটির বাঁধ দিয়ে ঘেরা— সেইখানেই তার কাজ– কেউবা স্নান করচে, কেউবা জল তুলচে, কেউবা বাসন মাজচে— কিন্তু আমি হচ্চি মেঘের মত; আমাকে ত মাটির ঘের দিলে চলবে না— আমাকে বাঁধতে গেলে ত বাধা পড়ব না— আমাকে যে ঐ শূন্যের ভিতর দিয়ে বর্ষণ করতে হবে। সব সময়েই যে বৃষ্টি ভরে আসে তা নয়, অনেক সময়ে অলস স্বপ্নের মত সূর্যের আলোতে রাঙিয়ে উঠে কিছুই না করে \9\9