পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুমি লিখেচ, তোমার মা বলেন, আগের চাইতে তুমি ভাল হয়েচ। ভাল হওয়ার আসল মানে কি জান, নিজের চারদিকে আসক্ত হয়ে ঘুরে না বেড়ানো— বড় হওয়ার বড় রাস্তায় সামনের দিকে বেরিয়ে যাওয়া। আমরা যখন নিজের ইচ্ছা নিজের প্রবৃত্তি নিজের ভোগের আয়োজনে নিজেকে বধি তখন অন্য সকলকেও বাধতে চেষ্টা করি— সেই নিরস্তর টানাটানিতে দুঃখ পাই দুঃখ দিই। কিন্তু আমাদের জীবনের এই লক্ষ্য হোক আমরা মুক্তি পাব, মুক্তি দেব। দেখ, মরুভূমিতে যে সব গাছ জন্মায় তা প্রায়ই কাটা গাছ। কেন বল দেখি ? তার কারণ হচ্চে এই সেখানকার মাটিতে রস খুব কম— এই জন্য অনেক টানাটানি করে’ গাছ যেটুকু খাদ্য পায় সেটুকু সম্বন্ধে তার সতর্কতা উগ্র হয়ে ওঠে। কোনো জন্তু এই গাছের একটুখানি ডালও যদি খেতে চায় তাহলে সেটুকু সে দিতে পারে না, কেননা সেটুকু তার অনেক কষ্টের তৈরি— এইজন্যে সে আগাগোড়া কণ্টকিত হয়ে থাকে। মানুষ সেই রকম নিজের ক্ষুদ্রতার মধ্যেই যখন নিজে থাকে তখন তার কৃপণতার অস্ত থাকে না, তখন সে ঈর্ষায় দ্বেষে কণ্টকিত হয়ে ওঠে। তখন সে নিজের সমস্ত কিছুকে নিজের মধ্যেই বেঁধে রাখবার জন্যেই রাত্রিদিন উৎকণ্ঠিত এবং উদগ্র হয়ে থাকে— তখনই সে চারদিককে কেবলি খোচা দিতে থাকে। কিন্তু যখনি সে জানে বড়র মধ্যে তার প্রতিষ্ঠা— এত বড়ই সে, যে, মৃত্যুর মধ্যেও তার অস্ত নেই; এত বড়ই সে, যে, সমত্ত দুঃখ শোক ক্ষতিকে অতিক্রম করে অসীমের দিকে সে চলেচে এবং অসীমের মধ্যেই নিবিষ্ট হয়ে আছে; সেই অনন্তের মধ্যেই তার সমস্ত প্রেমের সমস্ত আনন্দের উৎস,— তখন সে আর আপনার এটা ওটা, আপনার ছোট ছোট তীক্ষ ইচ্ছা নিয়ে অস্থির হয়ে বেড়ায় না— সে কাঙালের মত চাই চাই করে না তখন সে আপনাকে অনায়াসে ত্যাগ করতে পারে— কেননা, সেই ত্যাগ তার পক্ষে ক্ষতি নয়। যখন বিরক্ত হই, রাগি, উদ্বিগ্ন হই, ঈর্ষান্বিত হই, দুঃখ পাই— তখনি একবার ዓለ¢