পাতা:চিঠিপত্র (অষ্টাদশ খণ্ড)-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রিয় বিশেষণটাকে যদি চিঠি লেখবার একটা পাঠ করে তোলা যায় তা হলেই ওর সত্যকার মানেটা দৌড়ে পালায়। অথচ “প্রিয়” শব্দটার খুব একটা মস্ত মানে— অত বড় মানে যখন পালিয়ে যায় তখন শূন্য কথাটা ভয়ঙ্কর একটা ফকির মত পরিহাস করে। প্রথম যখন তোমার চিঠি পেয়েছিলুম তখন তোমার চিঠিতে “প্রিয় রবিবাবু” পড়ে ভারি মজা লেগেছিল। ভাবলুম রবিবাবু আমার প্রিয় হবে কেমন করে? যদি হত প্রিয় মিস্টার ট্যাগোর, তাহলে তেমন বেমানান হত না । কেননা রবিবাবু প্রিয়ও হতে পারে, অপ্রিয়ও হতে পারে, এবং প্রিয় অপ্রিয় দুইয়ের বাহিরও হতে পারে। তুমি যখন চিঠি লিখেছিলে তখন রবিবাবু প্রিয়ও ছিল না অপ্রিয়ও ছিল না, নিতান্ত কেবলমাত্র রবিবাবুই ছিল। কিন্তু চিঠির ভাষায় মিষ্টার ট্যাগোরের প্রিয় ছাড়া আর কিছু হবার জো নেই, তা আমার সঙ্গে তোমার ঝগড়াই থাক আর ভাবই থাক। আজকাল রবিবাবু পরীক্ষায় একেবারে দু তিন ক্লাস উঠে “রবিদাদা” হয়েচে, কিন্তু এখনো পত্রে তার প্রিয় খেতাব ঘুচল না। এই “প্রিয়” যদি ইংরেজি কায়দার প্রিয় হয় তাহলে কিন্তু তোমার সঙ্গে আমার ঝগড়া হবে— আমিও আমার চিঠিতে তার শোধ তুলব তবে ছাড়ব । আর যদি বিশুদ্ধ বাংলা মতে হয় তা হলে আপত্তি নেই বটে, তবু, যখন আমি রবিদাদা তখন ওটা বাদ দিলেও চলে— ও যেন সকালবেলায় বাতি জ্বালানো, যেন যার ফাসি হয়েচে তাকে কুড়ি বৎসর দ্বীপান্তর দেওয়া। অতএব আমি যেন থানধুতি পরা ঠাকুরদাদা, আমার কোনো পাড় নেই— আমি নিতান্তই সাদা রবিদাদা ! কি বল ? মাঝে মাঝে আমাকে তোমার সাজাবার সখ যায় বটে কিন্তু আমার কোনো সাজ নেই বলেই তুমি সাজিয়ে সখ মেটাতে পার। তোমরা মুক্তেশ্বরে গেছ শুনে খুসি হলুম। আমি ভ্রমণ করতে ভালবাসি— কিন্তু ভ্রমণের কল্পনা করতে আরো ভাল লাগে। কেননা, কল্পনার বেলায় রেলগাড়ি ঘটর ঘটর করে না, বেরেলিতে তিন চার ঘন্টা brやり